প্রকাশ: ২ জুন ২০২৫, ১৯:৪৪
মৌলভীবাজার, ২ জুন ২০২৫: মৌলভীবাজার জেলা সম্প্রতি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ব্যাপক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। জেলার সাত উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। এর ফলে রাস্তাঘাটসহ অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, যার কারণে সাধারণ জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, জেলা সদরসহ জেলার অন্যান্য স্থানেও নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করেছে। বিশেষ করে মনু নদীর পানি মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাট পয়েন্টে ৭৩ সেন্টিমিটার এবং মনু রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইভাবে, জুড়ী নদীর পানি জুড়ীতে বিপদসীমার ১৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে, স্থানীয় বাসিন্দারা বিপদে পড়েছেন এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ আসছে।
মৌলভীবাজার শহরের শিমুলতলা ও মাতারকাপন এলাকায় হাঁটুসম পানি জমে গেছে, যেখানে পানি অধিক থাকার কারণে যানচলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শহরের ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হওয়ায়, বন্যা আতঙ্ক বাড়ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও নাগরিকরা বন্যার কারণে নানা সমস্যায় পড়েছেন, যার ফলে তাদের ব্যবসা ও দৈনন্দিন কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে।
বড়লেখা, কুলাউড়া এবং রাজনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামও বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিখড়িয়া এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বাঁধায় মনু নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ বন্ধ রয়েছে, যার ফলে এই অঞ্চলের নদী থেকে পানি প্রবাহিত হয়ে স্থানীয় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অনেক খামারি তাদের মাছের খামার হারিয়েছেন এবং ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন থেকে জরুরি খাদ্য সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে। কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসন জয়পাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খুলে বন্যার্ত ২০টি পরিবারকে ত্রাণ বিতরণ করেছে। বড়লেখা উপজেলা থেকে ২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে ১৪৪ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরও পানির বিশুদ্ধকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করছে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, বন্যার প্রস্তুতির জন্য ১১৫ মেট্রিক টন চাল এবং ২১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিটি উপজেলায় ৩ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর সহায়তায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। তবে, নদী থেকে পানি কমলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ২২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পানি কমানোর জন্য কাজ করছে। ইতোমধ্যে সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রায় ২ হাজার বালুর বস্তা ভরাটের কাজ চলছে।