প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ১৬:৭
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নে অবস্থিত ফুলতলা চা বাগানটি দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এই বাগানে কাজ করা প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কাজ না থাকায় মজুরি ও রেশন বাগান কর্তৃপক্ষ থেকে পাচ্ছেন না তারা। এতে অনেক গরিব শ্রমিক পরিবার খাদ্য সংকটে পড়েছে। বিশেষ করে অসুস্থ নারী ও শিশুরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, অন্য কোথাও কাজের সুযোগ না থাকায় বাগানের বন্ধ থাকা তাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়।
ফুলতলা বাগানটি চার-পাঁচ বছর ধরে অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকে ধুঁকে চলছে। নিয়মিত মজুরি দিতে না পারার কারণে শ্রমিকদের অসন্তোষ বাড়ছিল। গত বছরের আগস্ট মাসে দুই মাসের জন্য বাগান সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই সময়ই চায়ের মৌসুম চলছিল। শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংকট নিরসনে কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। এরপর বাগানে কাজ বন্ধ হয়ে যায়, মজুরি ও বেতন পরিশোধ বন্ধ হয়।
বাগানটির শ্রমিক রাজকুমার রবিদাস জানান, তিনি পিত্তথলির রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসার জন্য অপারেশন দরকার, কিন্তু বাগানের বন্ধ থাকার কারণে টাকা জোগাড় করতে পারছেন না। তার মতো অনেক শ্রমিকই দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েছেন। শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি রবি বুনারজি অভিযোগ করেন, ১৭ সপ্তাহের মজুরি ও রেশন বাকি রয়েছে। শ্রমিকদের খাবার ও কাজের অভাবে জীবন সংকটে পড়েছে। প্রশাসনের কাছে বার বার সাহায্যের আবেদন করেও কোনও সাড়া পাননি।
ফুলতলা বাগানটি মোট ২ হাজার ৬৩৬ একর জমিতে বিস্তৃত। একসময় এটি ব্রিটিশ কোম্পানির মালিকানাধীন ছিল। বর্তমানে দ্য নিউ সিলেট টি এস্টেটস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান এটি পরিচালনা করে। মালিকপক্ষের কেউ শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। বাগানের প্রধান করণিক আবদুল ওয়াদুদ জানান, মৌসুমে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধে বড় অংকের অর্থের প্রয়োজন হয়, যা এখন সমস্যার কারণ।
ফুলতলা বাগান পুনরায় চালুর বিষয়ে গত সপ্তাহে ঢাকায় চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ব্যবস্থাপকরা বৈঠক করেন। আগামী ২৭ মে জুড়ী উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে একটি বৈঠক হবে যেখানে শ্রমিক প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। এই বৈঠকে বাগান চালুর সম্ভাবনা ও শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ জীবিকা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিখিতভাবে এখনও এই বৈঠকের ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানান।
চা শ্রমিকরা অধীর অপেক্ষায় আছেন সেই বৈঠকের, যা তাদের জীবনযাত্রার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। ফুলতলা বাগানের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতনতা ও সহযোগিতা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।