মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের সুপার মুজিবুর রহমান মজুমদারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জেল সুপার ক্ষমতার অপব্যবহার করে কারাগারের ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনকে একটি মুনাফার খনিতে পরিণত করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, বন্দিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ, সিট ও খাবারের বাণিজ্যসহ আরও অনেক অনিয়মের ঘটনা ঘটছে।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা জানান, বন্দিদের জন্য যে শপথ বাক্যটি গৃহীত হয়েছে—‘রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ’, তার ঠিক বিপরীত ঘটছে মৌলভীবাজার কারাগারে। বন্দিদের সিটবাণিজ্য, মোবাইল কলের বাণিজ্য, সাক্ষাৎবাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম প্রতিনিয়ত ঘটছে। রাজনৈতিক নেতা ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন যে, ঘুষ দিয়ে কিছু বন্দি ভালো খাবার ও সিট সুবিধা পাচ্ছে, তবে যারা টাকা দিতে পারে না, তারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক, তারেক মাহমুদ, যিনি সম্প্রতি কারাগারে ছিলেন, অভিযোগ করেছেন যে, জেল সুপার মুজিবুর রহমান মজুমদার বন্দিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের সুবিধা প্রদান করেন। তার মতে, 'বন্দিরা সাক্ষাৎ করতে গেলে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা ঘুষ দেন এবং খাবারের জন্যও তারা অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হন।'
অন্য এক ভুক্তভোগী, শিক্ষক শয়ন তাঁতী জানান, কারাগারে হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে গেলে তাকে ৬ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছিল। হাসপাতালে বেড পাওয়ার জন্য কোনো অসুস্থতা শর্ত নয়, বরং ঘুষ দেওয়া ছিল জরুরি। আর যারা ঘুষ দিতে পারেননি, তাদের মেঝেতে শুয়ে থাকতে হতো।
বন্দিদের মধ্যে একজন বলেন, তিনি কারাগারে ঢোকার পর ভালো খাবারের জন্য ঘুষ চেয়েছিলেন, কিন্তু ঘুষ না দেওয়ার কারণে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল। এমনকি নিয়মিত টেলিফোন কলের জন্যও ঘুষ দিতে হতো, যাতে তারা পরিবারের সাথে কথা বলতে পারেন। এ ছাড়া, জামিনে বের হওয়ার পরেও বেশ কিছু ভুক্তভোগী জানান, স্বজনদের সাথে দেখা করার জন্য টাকার বিনিময়ে নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে।
এছাড়া, কারাগারের ক্যান্টিনে খাবারের দাম ছিল অতিরিক্ত। ৩০ টাকা দামের খাবার সেখানে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছিল। বন্দিদের বাধ্য করা হচ্ছিল সরকারি খাবারের পরিবর্তে বাইরে থেকে ব্যক্তিগতভাবে ‘ডায়েট’ খাবার কিনতে, যা ছিল অনেক বেশি দামে। এমনকি সিগারেটের বিনিময়ে টেলিফোন ব্যবহারের সুযোগও দেওয়া হচ্ছিল, যা এক ধরনের ঘুষবাণিজ্য।