ভবদহের স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের উদ্যোগে আশার আলো

যশোরের ভবদহ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে এবার মাঠে নামলেন সরকারের তিন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা মঙ্গলবার ভবদহ স্লুইসগেট এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এই সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন সংশ্লিষ্ট সচিবগণ, সেনাবাহিনীর যশোর এরিয়া কমান্ডার ও জিওসি মেজর জেনারেল জে এম ইমদাদুল ইসলাম।

বেলা পৌনে ১২টায় তারা ভবদহ ২১ ভেন্ট স্লুইসগেট এলাকায় পৌঁছে নদীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর ভবদহ কলেজ মাঠে এক ব্রিফিংয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, এবারের বর্ষায় জলাবদ্ধতা যেন না হয় সেজন্য সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নদী খননের কাজ শুরু হচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিল কমানো, কৃষি ঋণের সুদ মওকুফের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকার ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি) শুরু করেছে। সকল পক্ষের মতামত নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে একটি চূড়ান্ত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

পরিদর্শনের শুরুতে সকালে নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে হেলিকপ্টারে অবতরণ করেন তিন উপদেষ্টা। এরপর ধানক্ষেতসহ এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জমি ঘুরে দেখেন তারা। এরই মধ্যে ভবদহ পাড়ের মানুষ প্ল্যাকার্ড হাতে তাদের স্বাগত জানান এবং টিআরএম চালুসহ নদী খননের দাবি তোলেন।

ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার বিভিন্ন অংশে প্রভাব ফেলে। প্রতি বর্ষায় পলি পড়ে নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হয় এবং হাজার হাজার ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও শিক্ষা-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ডুবে যায়।

দীর্ঘ চার দশকে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও এলাকাবাসী কার্যকর কোনো স্থায়ী সমাধান পায়নি। এ নিয়ে বারবার সরকারের কাছে আবেদন করলেও দুর্নীতির অভিযোগ ও স্থানীয় নেতাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা সমস্যাকে জটিল করে তুলেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

তবে এবারের সরকারি সফরে এলাকাবাসী নতুন করে আশার আলো দেখছেন। তারা মনে করছেন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নদী খনন এবং সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় হয়তো ভবদহের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান এবার বাস্তবায়িত হতে পারে।