প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:৪৮
শিরোনাম: সুনামগঞ্জের এসপি আনোয়ার হোসেন প্রত্যাহার
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার আ.ফ.ম আনোয়ার হোসেন খানকে তার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘুস ও দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসে। সোমবার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এক আদেশে তাকে ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সদর দপ্তরে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এসপি আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ঘুস গ্রহণের মাধ্যমে সীমান্ত চোরাচালান, পোষ্টিং বাণিজ্য ও গ্রেফতার বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন। জেলার বিভিন্ন থানার ওসি, ডিবি পুলিশসহ নিজস্ব দালালদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। নিরীহ মানুষদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করার ঘটনাও উঠে আসে অভিযোগে।
বিশেষ করে তাহিরপুর থানার ওসি দেলোয়ার, মধ্যনগর থানার ওসি সজীব রহমান, দোয়ারাবাজার থানার ওসি জাহিদসহ জেলার বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে চোরাচালান ও ঘুস লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার প্রশাসনিক পদ ব্যবহার করে মাদক, কয়লা, গরু ও খনিজ বালুর অবৈধ বাণিজ্যের পথ সুগম করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এসপি আনোয়ার যোগদানের পর থেকেই ঘুসের টাকায় বিলাসবহুল স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে, তার দুই ভাই এই অর্থ লেনদেনে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। এমনকি এক বিএনপি কর্মীকে গ্রেফতার করানোর জন্য তিনি ঘুস হিসেবে একটি আইফোন গ্রহণ করেছিলেন বলে জানা গেছে।
তাহিরপুরের এক নারীর সন্তান হত্যার অভিযোগপত্র থেকে আসামিদের বাদ দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে। ন্যায়বিচার চাইতে গেলে ওই নারী এসপির হাতে লাঞ্ছিত হন বলেও জানা যায়। সীমান্তের বিভিন্ন থানায় চোরাচালান নিশ্চিত করতে পোষ্টিং বাণিজ্যের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে।
সুনামগঞ্জের বিভিন্ন থানায় তার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের পোষ্টিং দিয়ে তিনি ঘুস ও দুর্নীতির জাল বিস্তার করেন। বিশেষ করে তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার ও ছাতকের পুলিশ কর্মকর্তাদের চোরাচালান ব্যবসায় যুক্ত করার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে থাকার সময় গরু, কয়লা, মাদক ও বালি-পাথরের অবৈধ ব্যবসাকে ছত্রছায়া দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
এসপি আনোয়ারের দুর্নীতি এতটাই বিস্তৃত ছিল যে, তার নিজস্ব দালাল চক্রও বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে সুনামগঞ্জে তার প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক চলছিল। শেষ পর্যন্ত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।