প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৪৬
দারিদ্র্য, সীমাবদ্ধতা, এবং নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও দিনাজপুরের হাকিমপুরের কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা লায়লা খাতুন এখন বাংলাদেশে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পেরেছেন। লায়লা খাতুনের গল্প, যা তার অধ্যাবসায়, কঠোর পরিশ্রম এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির ফলস্বরূপ, একটি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে সে তার জীবনের এক বড় স্বপ্ন পূরণ করেছে।
লায়লার জন্ম হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় ইউনিয়নের বিশাপাড়া গ্রামে, যেখানে তার পরিবারের সদস্যরা সীমিত আয়ে সংসার চালান। তার বাবা এনামুল হক কৃষক, আর মা গৃহিণী। ছোট থেকেই অভাব-অনটনের মধ্যে বেড়ে ওঠা লায়লা প্রাথমিক শিক্ষার শুরু থেকেই কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন। বিশাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে পিএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে তিনি পরবর্তীতে বিশাপাড়া আদর্শ স্কুল থেকে ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেন।
এসএসসি শেষে লায়লা ভর্তি হন স্থানীয় হাকিমপুর মহিলা কলেজে, যেখানে তিনি ২০২৪ সালে আবারো গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। তার পর, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেন, এবং ১৯ জানুয়ারি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে ঢাকা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে মেধা তালিকায় ২৯৬ তম হয়ে ভর্তি সুযোগ পেয়েছেন। তার এই সাফল্য পুরো গ্রামেই আনন্দের সঞ্চার করেছে।
গ্রামের সাধারণ মানুষ ও তার শিক্ষকরা লায়লার সফলতায় খুশি। তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে তার ছবি পোস্ট করে তার সফলতার জন্য তার প্রতি শুভেচ্ছা জানান। তবে লায়লা নিজেকে প্রচারের বাইরে রাখতে চান। তিনি বলেন, "আমি মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আমার বাবা-মা এবং শিক্ষকরা আমাকে যে সহায়তা দিয়েছেন, তার জন্য আমি চিরকাল কৃতজ্ঞ।"
লায়লার বাবা এনামুল হক বলেন, "আমার জন্য আমার মেয়েকে পড়ানো ছিল অসম্ভব, তবে আল্লাহর রহমতে এবং লায়লার মেধা ও অধ্যাবসায়ের কারণে সে আজ এতদূর আসতে পেরেছে।" তিনি তার মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য দোয়া চেয়েছেন, যাতে লায়লা আরও বড় হয়ে দেশের সেবা করতে পারে।
গ্রামের প্রাইভেট শিক্ষক এরশাদুল ইসলাম জানান, লায়লা ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী। তিনি বলেন, "সে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে, এবং তার সফলতা আমাদের সকলের জন্য গর্বের বিষয়।" তিনি আরও বলেন, "লায়লা যেন মানুষ হয়ে গ্রামে ফিরে এসে সাধারণ মানুষের সেবা করতে পারে, এই কামনা করি।"
বিশাপাড়া আদর্শ স্কুলের প্রধান শিক্ষক আঃ কুদ্দুস বলেন, "লায়লা খাতুনের মধ্যে একটা বিশেষ ইচ্ছাশক্তি ছিল, যা তাকে সাফল্যের পথে নিয়ে গেছে। আমরা তাকে সবসময় উৎসাহিত করেছি, এবং তার সফলতা আমাদের সকলের জন্য আনন্দের বিষয়।"
হাকিমপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মামুনুর রশীদ (আজাদ) জানান, "লায়লা সব সময় পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকতো। তার অধ্যাবসায়ের কারণে সে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে। আমি তার ভবিষ্যৎ জীবনের মঙ্গল কামনা করছি।"
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় বলেন, "লায়লা খাতুন আমাদের গর্ব। তার সফলতার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, কঠোর পরিশ্রম এবং ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।"
লায়লার এই সাফল্য কেবল তার পরিবার এবং গ্রাম নয়, পুরো হাকিমপুর উপজেলাতেই একটি বড় উৎসাহের সৃষ্টি করেছে। তার জীবনের এই সফলতার গল্প অজস্র শিক্ষার্থীকে প্রেরণা জুগিয়ে চলেছে, এবং তার উদাহরণে অন্যরা জানে যে, যদি ইচ্ছাশক্তি থাকে, তাহলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।