প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৫১
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কেঁচো সার চাষাবাদে নতুন সম্ভাবনার দিশা দেখাচ্ছে। পরিবেশবান্ধব এবং সাশ্রয়ী এই ভার্মি কম্পোস্ট দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রাসায়নিক সার থেকে দূরে সরে এসে কেঁচো সার ব্যবহারে কৃষকদের খরচ কমছে এবং মাটির উর্বরতা বাড়ছে। গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নবুওছিমুদ্দিন পাড়ার গৃহবধূ জাসমা আক্তার নিজ প্রচেষ্টায় এই সারের উৎপাদন শুরু করে এখন নিজের পাশাপাশি অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন।
জাসমা আক্তার জানান, প্রথমে ৩ কেজি কেঁচো দিয়ে ছোট পরিসরে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি শুরু করেন। গরুর গোবর, খড়কুটো এবং অন্যান্য জৈব পদার্থ ব্যবহার করে তৈরি করা এই সার স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তিনি বাড়ির পাশে তিনটি সেডে এই সারের উৎপাদন শুরু করেন। বর্তমানে তার খামার থেকে উৎপাদিত সার আশেপাশের কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দূর-দূরান্ত থেকে কৃষকরা তার কাছ থেকে জৈব সার কিনতে আসছেন।
তিনি আরও জানান, স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে তাকে খামার বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন অনুদান দেওয়া হয়েছে। তবে জাসমা মনে করেন, তার খামার পরিচালনা করতে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, তার খামারটি আরও বড় করতে পারলে আশপাশের মানুষদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
স্থানীয় কৃষক শামসুল হক বলেন, রাসায়নিক সারের তুলনায় জৈব সার সস্তা এবং মাটির জন্য উপকারী। জাসমার তৈরি এই সার ব্যবহার করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ফলনও ভালো হচ্ছে। আরেক কৃষক হারুনার রশিদ জানান, জাসমার উদ্যোগ অনেকের কাছে প্রেরণার উৎস। তার খামারে কাজ করে কিছু নারী কর্মসংস্থান পেয়েছেন, যার ফলে তাদের সংসারেও স্বচ্ছলতা ফিরেছে।
নারী শ্রমিক চায়না আক্তার জানান, তিনি সার উৎপাদন থেকে শুরু করে প্যাকেটজাত করার কাজে নিয়োজিত আছেন। এই কাজের আয় দিয়ে তিনি নিজের ছেলের পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করেছেন। একসময়ের অভাব-অনটন দূর করে এখন তিনি স্বাবলম্বী।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, ভার্মি কম্পোস্ট মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহারে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা কেঁচো সার দিয়ে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। তিনি জানান, গোয়ালন্দ উপজেলায় এখন ২০-৩০টি কেঁচো সার খামার চালু রয়েছে এবং এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।
তিনি আরও জানান, কেঁচো সারের উৎপাদনে খরচ কম এবং এটি ব্যবহার করলে কৃষকরা অনেক উপকৃত হন। মাটির গুণাগুণ রক্ষা করার পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষকদের মাঝে কেঁচো সার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জাসমা আক্তারের উদ্যোগ শুধু তার নিজের সংসারেই পরিবর্তন আনেনি, বরং এলাকার কৃষি উন্নয়নেও ভূমিকা রেখেছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ তার এই প্রচেষ্টাকে আরও সফল করতে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছে। কেঁচো সার চাষাবাদের এই দৃষ্টান্ত গোয়ালন্দে কৃষি এবং নারী উন্নয়নের নতুন অধ্যায় রচনা করেছে।