প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৫, ১৬:২৬
কুড়িগ্রামের উলিপুরে স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে গেলেও বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলামের পরিবার আজও মানবেতর জীবনযাপন করছে। মৃত এই যোদ্ধার স্ত্রী জোবেদা বেগম ভিক্ষা করে আর একমাত্র ছেলে আব্দুল জব্বার ঠেলাগাড়ি চালিয়ে সংসার চালান। অথচ সরকারি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন একজন সরকারি চাকুরিজীবী, যার বিরুদ্ধে ভুয়া পরিচয়ে ভাতা ভোগের অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, মৃত মফিজুল ইসলামের নাম ভারতীয় তালিকায় ৩৯৭০৩ নম্বর হিসেবে উল্লেখ থাকলেও তার পরিবার কখনো সেই সুবিধা পায়নি। বরং একই নামধারী দলদলিয়া ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ভাতা ভোগ করছেন।
আব্দুল জব্বার দাবি করেছেন, ভাতার জন্য বহুবার আবেদন করেও কোনও ফল পাননি। সমাজসেবা কর্মকর্তাদের কাছে গেলে তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা দাবি করা হয়। সেই টাকার মধ্যে আট হাজার টাকা জমা দিলেও কাজ হয়নি। বরং প্রতারিত হয়েছেন তিনি, টাকা ফেরতও পাননি।
২০২৩ সালে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেও লাভ হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনে জব্বারের মা জোবেদা বেগমকে ভুয়া বলে প্রমাণিত করা হয়, যদিও এলাকাবাসী এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তাকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী বলেই চিহ্নিত করেছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে উত্তর দলদলিয়া ইউনিয়নের ভাতাভোগী মফিজুল ইসলাম বলেন, তিনি বৈধভাবে ভাতা পাচ্ছেন এবং সমাজসেবা অফিস তার পক্ষে প্রতিবেদন দিয়েছে। অন্যদিকে, অনন্তপুর গ্রামের জব্বার জানান, তার বাবা ভারতের মুজিব ক্যাম্পে ট্রেনিং নিয়েছিলেন এবং সে বিষয়ে চারজন জীবিত সহযোদ্ধার সাক্ষ্য রয়েছে।
সেই চার মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে রয়েছেন মো. আব্দুল বাতেন সরকার, নুর মোহাম্মদ, মো. রবিউল ইসলাম এবং শ্রী সুবল চন্দ্র রায়, যারা একযোগে বলেছেন মফিজুল ইসলাম দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিখোঁজ হন এবং আর ফেরেননি। তারা নিশ্চিত যে, জব্বারের বাবা-ই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।
সমাজসেবা কর্মকর্তার প্রতিবেদনেও একাধিক অনিয়ম পাওয়া গেছে। জোবেদার ঠিকানা বদল করে অন্য এলাকার হিসেবে তাকে ভুয়া প্রমাণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার সাহা জানিয়েছেন, তথ্য যাচাই চলছে এবং নির্দেশনা এলে পুনঃতদন্ত করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নির্ধারণ করা হবে।