প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ২:৫০
দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী হাকিমপুর হিলি উপজেলায় ২১ টি পূজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। এখন শেষ মুহূর্তে পূজা মন্ডপগুলোতে চলছে সাজসজ্জার কাজ। মন্ডপে মন্ডপে চলছে সাজ সাজ রব। আর মাত্র বাকি ২ দিন। চলছে ধোয়ামোছার কাজ।সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আগামী ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী তিথিতে অধিবাসের মধ্য থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। সকল পূজামন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়। প্রতিমা তৈরির শিল্পীরা শেষ মহূর্তের রং তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। কেউবা শেষ মহূর্তের রং তুলির কাজে ব্যস্ত। কেউ মেইন গেট ও রাস্তার আলোক সজ্জার কাজে ব্যস্ত।
সনাতনীদের (হিন্দু) শাস্ত্র মতে, ব্রহ্মার বর অনুযায়ী কোনো মহিষাসুরকে একমাত্র নারী শক্তির দ্বারা সম্ভব ছিল বধ করা। কোনো মানুষ বা দেবতা দ্বারা তাকে বধ করা সম্ভব ছিল না। তাই ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব শক্তি দ্বারা সৃষ্ট নারীশক্তি সিংহবাহিনী মা দুর্গা মহিষাসুরকে পরাজিত করে হত্যা করেন। মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। আর এভাবেই মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গার আগমন ঘটে মর্ত্যলোকে। গত ১৫ অক্টোবর রবিবার মহালয়ার মধ্যে দিয়ে দূর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
হাকিমপুর হিলি উপজেলার পূজামন্ডপ গুলোতে চলছে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। শেষ মুহূর্তে প্রতিমা তৈরির লিল্পীরা প্রতিমাগুলোর সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য তৈরি করা হচ্ছে মাটির বাহারি নকঁশা। দেবী দূর্গাকে পড়ানো হচ্ছে পোশাক। শেষ মুহূর্তের রং তুলি আঁচর দিচ্ছেন প্রতিমা শিল্পীরা। এ পেশার শিল্পীরা তাঁদের মনের মাধুরী মিশিয়ে কাজ করছেন।
হাকিমপুর হিলি পৌরসভার চন্ডিপুর সর্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সভাপতি অলক কুমার বসাক মিন্টু বলেন, এ পূজা মন্ডপে রং তুলি কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।এখন আমাদের কর্মীদের নিয়ে ধোয়ামোছার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে। সেই সাথে চলছে পূজামন্ডপের সাজসজ্জার কাজ। গেট ও রাস্তার লাইটিং এর কাজ। অন্য বছরের চেয়ে এবারে আমর খুব ভালো ভাবে পূজা উদযাপন করবো বলে আশা করছি।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পঞ্জিকা মতে, আগামী ২০ অক্টোবর থেকে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুভারম্ভ হবে। যথাক্রমে ২১ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ২২ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ২৩ অক্টোবর মহানবমী ও ২৪ অক্টোবর দশমীর দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এবারের শারদীয় উৎসব সম্পন্ন হবে।
উপজেলার সাদুড়িয়া নারায়ন শাহা সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরে প্রতিমা তৈরি কাজ করতে আসা কনক চন্দ্র শীল জানায়, মাত্র একদিনের মধ্যে রং তুলির কাজ শেষ করতে হবে। এখন দিন রাত সমান কাজ করতে হচ্ছে। অন্য দিকে চলছে পূজা মন্ডপের সাজসজ্জার কাজ।
হাকিমপুর হিলি উপজেলার ১ টি পৌরসভাসহ ৩টি ইউনিয়নে ২১ টি পূজা মন্ডপে এ বছর দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
হাকিমপুর হিলি উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর শাহা রিপন মুঠোফোনে বলেন, মহামারি করোনার কারণে গত দুই বছর সকল নিয়ম কানুন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়মরক্ষার পূজা হয়েছে। এবছর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় শারদীয় দুর্গা পূজা উদযাপন করবো বলে আশা করছি। ইতিমধ্যে উপজেলার প্রতিটি পূজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে মেইন গেট, রাস্তার লাইটিংসহ সাজসজ্জার কাজ।
শারদীয় দুর্গা উৎসব চলাকালীন সময়ে আইন শৃঙ্খলার বিষয়ে জানতে চাইলে হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ছায়েম মিয়া বলেন, এবার উপজেলায় মোট ২১টি মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। বেশীরভাগ মন্দিরে দেবী তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রতিটি ইউনিয়ন ও বিটে আমাদের বিট অফিসার রয়েছে। নিয়মিতভাবে তারা কমিটির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আগামী ২০ অক্টোবর থেকে প্রতিটি পূজামণ্ডপে আনসার সদস্য মোতায়েন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বীরা যাতে নির্বিঘ্নে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করতে পারে, এ জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুর্গাপূজার সময় কোন অপ্রিতিকর ঘটনা না ঘটে এর জন্য টহল পুলিশ, পোশাকধারী পুলিশ ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানান তিনি।