
বিসিসি: মেয়র পদে ১০জন ১৯৮ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৩, ৩:১৮

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন মঙ্গলবার ৬ মেয়র প্রার্থীসহ মেয়র পদে মোট ১০জন, ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৪৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের জন্য ৪২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির। তিনি জানান, মোট ২৩৩ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও জমাদানের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত ৩৫ প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেননি।
১০ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ মনোনীত আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত), জাতীয় পার্টি মনোনীত ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম ও জাকেরপার্টির মনোনীত প্রার্থী আলহাজ মো. মিজানুর রহমান বাচ্চু মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি মুফতি সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের, বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা প্রয়াত আহসান হাবিব কামালের ছেলে সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রুপন, আলী হাওলাদার, লুৎফর কবির এবং সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদিকে নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গের দায়ে ৬ কাউন্সিলর প্রার্থীকে জরিমানা করেছে নির্বাচন কমিশন।

মঙ্গলবার দুপুরে মনোনয়নপত্র দাখিল শেষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ পুরো সৃষ্টি হয়নি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের বিষয়টিও আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। আমরা দেখেছি কোনো কোনো প্রার্থী প্রতীক পাওয়ার আগেই প্রতীকসহ লিফলেট বিতরণ করছে, যেটা নির্বাচনী আচরণের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তিনি বলেন, ফলাফল পাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা কোনো অবস্থাতেই শঙ্কা মুক্ত নই। আমরা চেষ্টা করবো নির্বাচনে সব ভোটারকে উপস্থিত করতে, আমাদের হাতপাখা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য। বাকিটা সরকার কী করে, না করে সেটাও দেখার বিষয়। আমি চাই প্রতিটি সেন্টারে একজন ম্যাজিষ্ট্রেট এবং যথেষ্ট পরিমাণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যেন মোতায়েন করা হয়।
বিএনপি পরিবারের সন্তান সাবেক ছাত্রদল নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন বলেন, সুষ্ঠুভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পেরেছি। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিগত ১৫ বছরে দেখেছি এ সরকারের অধীন ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে, উপ-নির্বাচন বা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনটাই সুষ্ঠু হয়নি। এখানে ইলেকশন ফিক্সিং হয়ে থাকে। সরকারি দল চায় না তাদের শরীক দল ছাড়া কেউ নির্বাচনে অংশ নিক, তাই মোটেও আশাবাদী নই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।

তিনি বলেন, এখানে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ যে ফুফাতো ভাইকে জয়ী করবে, না গণতন্ত্রকে জয়ী করবে, মানুষের ভোটাধিকারকে প্রতিষ্ঠা করবে। এই সরকারের অধীন কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না এটা বহিঃবিশ্বের মানুষকে দেখানোর জন্য এবং সারাদেশের মানুষকে সচেতন করার জন্য আমি নির্বাচনে এসেছি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায় সরকার ছাড়া এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। কারণ তারা দিনের ভোট রাতে করে, কারচুপি করে, ফলাফল পরিবর্তন করে তাই এ সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। জনসম্মুখে আমি প্রমাণ করতে চাই যে, বিগত ১৫ বছর যাবত আপনারা যা দেখেছেন, শুনেছেন বাস্তবেই এটা সত্য, এই সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। আমি প্রতিবাদ স্বরূপ এই নির্বাচনে এসেছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দিলে আমার বিরুদ্ধে দুদকের চিঠি আসতো না, আমাকে হয়রানি করা হতো না। আমি মনোনয়ন সাবমিট করব এটা একটি মহল চায়নি। আমি মনে করি দুয়েক দিনের মধ্যে আমার নামে পুনরায় কোনো অভিযোগ আসবে। বর্তমান সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। বর্তমানে আমার বিএনপিতে কোনো পদ-পদবী নেই, তবে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলাম। আর এজন্য আমার নির্বাচনে অংশ নেওয়টা সরকারের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে নিবার্চনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে বরিশালে ছয় কাউন্সিলর প্রার্থীকে ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার সকাল থেকে কয়েক দফায় এ জরিমানা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ। তারা হলেন এম রকিবুল হাসান, আবি আব্দুল্লাহ ও মঈন উদ্দিন আহমেদ। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানাপ্রাপ্ত কাউন্সিলরদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঈন উদ্দিন আহমেদ জানান, আগে থেকেই প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে সতর্ক করা হয়। তারপরও যারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন তাদের জরিমানা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত: বরিশাল সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল মঙ্গলবার। বাছাই আগামীকাল ১৮ মে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের শেষ সময় ২১ মে। আপিল নিষ্পত্তির শেষ সময় ২৪ মে। প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ মে এবং প্রতীক বরাদ্দ ২৬ মে। আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।


সর্বশেষ সংবাদ
