প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২২, ০:২২
বরিশালে কিশোরীকে কুপ্রস্তাব দেয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় কোতয়ালী মডেল থানার এসআই মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দেয়া ১৫ বছরের ওই কিশোরীর একান্ত ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দেয়া, রুমডেট করার জন্য চাপ প্রদান এবং অর্থদাবী ও অর্থআদায়ের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় এসআই মেহেদী হাসানকে গ্রেফতারপূর্বক বুধবার দুপুরে আদালতের নিকট সোপর্দ করা হয়েছে। এ নিয়ে পৃথক অপরাধে একমাসের মধ্যে নিজ থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলো পুলিশের আরও এক এসআই।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে একটি অভিযোগ আসে, যেখানে অভিভাবকরা দাবী করেন তাদের মেয়ের মোবাইলে কেউ একজন অশ্লীল ম্যাসেজ পাঠায় এবং টাকা দাবী করছে। এ ঘটনায় আমরা তদন্তে নামি। একপর্যায়ে অজ্ঞাত ব্যক্তি যখন বিকাশ নাম্বারে টাকা চায় তখন সেখানে টাকা পাঠিয়ে আমরা অজ্ঞাত ব্যক্তিকে গ্রেফতারে অভিযান চালাই। অভিযানে গিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে ধরার পর দেখা যায় সে কয়েকদিন আগে অন্য একটি বিষয়ে সাসপেন্ড হওয়া উপ-পরিদর্শক (এসআই)।
কমিশনার বলেন, এ ঘটনার পর যে অভিযোগ করেছে এবং যে গ্রেফতার হয়েছে তার মোবাইল ফোন যাচাই করে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে এ বিষয়ে গ্রেফতারকৃতর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আর সেইসাথে নিয়মানুযায়ী বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রস্তুতিও চলছে।
এদিকে বরিশাল নগরীর বাসিন্দা ওই কিশোরীর মায়ের দায়ের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানাগেছে, গত ৮ নভেম্বর রাত পৌনে ৯ টার দিকে ভিকটিম কিশোরীর নাম্বারে কল করে গ্রেফতারকৃত এসআই মেহেদী হাসান । তবে সে তার পরিচয় গোপন রেখে জানায়, কিশোরীর একান্ত ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও তার কাছে রয়েছে। এরপর কিশোরীর হোয়াটস্ অ্যাপে সেই ছবি ও ভিডিও পাঠায়। পরবর্তীতে ভিকটিম কিশোরীকে হোয়াটস্ অ্যাপ নাম্বারে ফোন করে ও ম্যাসেজ দিয়ে আরও একান্ত ব্যক্তিগত ভিডিও ধারণ করে হোয়াটস অ্যাপ নাম্বারে পাঠাতে বলে ওই এসআই এবং কিশোরীকে নানানভাবে ব্লাকমেইল শুরু করে। এরপর বিভিন্ন সময়ে সে কিশোরীর হেয়াটস্ অ্যাপে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে সেইরকম ছবি ও ভিডিও ধারণ করে পাঠাতে বলে চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু ওই কিশোরী এতে রাজি না হলে তার বন্ধু বান্ধব ও নিকট আত্মীয় স্বজনদের নিকট প্রেরণ করে এবং আরও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। পাশাপাশি কু-প্রস্তাব প্রদান ও রুমডেট করার জন্য কিশোরীকে চাপ দিতে থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় কিশোরীর একান্ত ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে প্রচার ও প্রকাশ করে মানহানি করার ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশের মাধ্যমে গত ১৫ নভেম্বর ১ হাজার টাকাও নেয় গ্রেফতার হওয়া এসআই। কিন্তু এরপর কিশোরীর কাছে আরও টাকা চাইলে সে বিষয়টি অভিভাবকদের জানালে তারা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়। পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে ফাঁদ পেতে অভিযান চালিয়ে নগরের বাকলার মোড় এলাকা থেকে এসআই মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করে।
কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই আরাফাত হাসান সাংবাদিকদের জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার আসামী হিসেবে এসআই মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করা হয় এবং বুধবার দুপুরে আদালতের নিকট আসামীকে সোপর্দ করা হয়।
উল্লেখ্য গ্রেফতার হওয়া এসআই মেহেদি হাসানসহ থানার অপর এসআই ইব্রাহিম খলিলকে পর্যটকদের আটকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িকভাবে বরখাস্ত অবস্থায় থাকা এসআই মেহেদি হাসান বরিশাল নগরের স্ব-রোড বাকলার মোড় সংলগ্ন একটি বহুতল ভবনের তিন তলায় ভাড়া থাকেন।
এরআগে গত ১৫ অক্টোবর মামলার অভিযোগ নিয়ে কোতয়ালী মডেল থানার এসআই আবুল বাশারের কাছে আসা বিধবা নারীকে ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।