প্রকাশ: ২৩ মে ২০২১, ২০:৫৫
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় চলতি মৌসুমে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। গাছে গাছে ঝুলছে পাকা টসটসে লিচু। লিচু বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছে লিচু চাষিরা। আর এসব আড়ৎদার ও খুচরা পাইকারের মাধ্যমে স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে এসব লিচু। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে লিচু চাষের আগ্রহ দিনদিন বেড়েই চলছে। প্রচন্ড এই রোদে দু-একটা লিচুর বাগান ছাড়া তেমন কোন ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে চাষিরা।
বাগান মালিকরা রসালো টসটসে লিচুর পসরা সাজিয়ে রেখেছেন। বাজারে চলছে বেচাকেনা। লিচু চাষি, ব্যবসায়ী ও প্রাইকারী আড়ৎদারদের হাঁকডাকে মুখরিত হচ্ছে এই এলাকার বড় লিচুর আড়ৎ হামলাইকুল কানু মোল্লার বটতলা। স্থানীয় বাজারে লিচুর ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলার হামলাইকুল, মোল্লাবাজার, বেরগঙ্গারামপুর, মামুদপুর, নাজিরপুর, নায়ায়নপুর, পাটপাড়া, বিন্যাবাড়ি, শিধুলী, পলশুড়া, চলনালীসহ বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লিচুর চাষ হয়। গত দুই বছর আগে ৪শ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়। দাম ও ফলন ভাল পাওয়ায় এই দুই বছরে তা’ বেড়ে ৪১০ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। এই এলাকার লিচু চাষির সংখ্যা প্রায় ১ হাজার জন। গাছে গাছে ঝুলছে পাকা লিচু। যা দেখলে সকলের মন জুড়িয়ে যায়। বাজারে ব্যাপকভাবে পাকা লিচু উঠেছে। বাগানে চলছে লিচু বিক্রির জন্য সংগ্রহের কাজ।
এ মৌসুমে লিচু চাষে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন এই এলাকার কৃষকরা। এমন কোনো বাড়ি নেই যে যার আঙ্গিনায় ৫-১০ টা লিচুর গাছ নেই। গাছে গাছে লাল লিচুতে রঙিন-লাল হয়ে আছে পুরো এলাকা। গ্রামজুড়ে এখন গাছভর্তি লিচু আর লিচু। থোকায় থোকায় বাহারি লিচু যেন সবার মন কাড়ছে। সেই সঙ্গে লিচুর মৌ মৌ গন্ধ আর ছোট পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে এলাকা এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার হামলাইকুল, মোল্লাবাজার, বেরগঙ্গারামপুর, মামুদপুর, নাজিরপুর, নায়ায়নপুর, পাটপাড়া, বিন্যাবাড়ি, শিধুলী, পলশুড়া, চলনালীসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। গাছ থেকে সংগ্রহ করে লিচু বাজারজাত করতে নারী-পুরুষসহ সব বয়সী লোকজন এ কাজে জড়িয়ে পড়েছেন।
এই এলাকার চাষিরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লিচু চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন। লিচু চাষ করে কম শ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় ধানের জমিগুলো লিচু বাগানে রুপান্তরিত হচ্ছে বলে চাষিরা জানান। গুরুদাসপুর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০-৩৫ ট্রাক লিচু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে।
চাষি মো.লিটন মাহমুদ বলেন, গত বছরের চেয়ে এ মৌসুমে লিচু ভালো হয়েছে। স্থানীয় বাজারে দামও এখন পর্যন্ত ভালো আছে। বাগান থেকে লিচু তোলার শেষ সময় পর্যন্ত প্রাকৃতিক কোনো দূর্যোগ না হলে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবেন বলে জানান তিনি। এই এলাকার লিচু রসালো, মিষ্টি ও স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় এর কদরও বেশি।
লিচুর আড়ৎদারের সভাপতি সাখাওয়াত মোল্লা বলেন, গত সপ্তাহ থেকে লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতিদিন এখানে লক্ষ লক্ষ টাকার লিচু কেনা-বেচা হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেপারী আসে আমাদের বাজারে। তারপরও এ বছর সরকারী ভাবে আমাদের লিচুর হাট ইজারা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুন আর রশিদ বলেন, গুরুদাসপুরে এবছর ৪১০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। তিনি বলেন, প্রকার ভেদে প্রতি হাজার ১ হাজার ৮০০ থেকে শুরু করে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, ‘এবার উপজেলায় ৪১০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় কিছু সমস্যা হলেও এবছর লিচু ফলন ভাল হয়েছে। এবার উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ৯০ মেট্রিক টন নির্ধারন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে চাষীরা লিচু বাজারজাতকরণ শুরু করেছে। আমরা আশা করছি চাষীরা মৌসুমি এই ফল বিক্রি করে লাভবান হবে।’