বোরো ধান ঘরে তোলার মৌসুম চলছে। কিন্তু তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে সারাদেশে জারি করা হয়েছে ‘হিট এলার্ট’। তাপ প্রবাহের মধ্যে কৃষকরা মাঠে ধান কাটতে গেলে হিট স্ট্রোক করতে পারেন- এমন শঙ্কা থেকে কৃষকদেরকে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছে শরীয়তপুর কৃষি অফিস। কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী সন্ধ্যার পর টর্চ লাইটের সাহায্যে ধান কাটছেন কৃষকরা।
গত কয়েকদিন ধরে শরীয়তপুর সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার ফসলি মাঠে কৃষকদেরকে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে ধান কাটতে দেখা গেছে।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর আমাদের বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বেশি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জেলায় বেশ ভালো ফলন হলেও সারাদেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে হিট স্ট্রোকের ভয়ে দিনের বেলা কৃষকরা মাঠে ধান কাটতে যেতে পারছেন না। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত টর্চ লাইট জ্বালিয়ে কৃষকদেরকে ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষি বিভাগ থেকে। গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে ৩৩৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৫২৬ হেক্টর। গত মৌসুমে বোরো উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৯০৬ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬২৭ মেট্রিক টন। তীব্র তাপপ্রবাহ চলমান থাকলেও উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাপ প্রবাহের কারণে দিনের বেলা মাঠে গিয়ে ফসল কাটা কষ্টসাধ্য কাজ। এছাড়াও কৃষকরা যেন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে না পড়েন- সেজন্য কৃষি বিভাগ থেকে তাদেরকে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ধান কাটতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গোসাইরহাটের বিনুইট্টা গ্রামের মো. হাকিম ঢালী এ বছর ৭০ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। তার চাষাবাদকৃত জমিতে বেশ ভালো ফলন হলেও তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে দিনের বেলা তিনি ধান কাটতে না পেরে বেশ চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি টর্চ লাইটের আলোতে সন্ধ্যার পর থেকে ধান কাটা শুরু করেছেন।
হাকিম ঢালী বলেন, যে গরম এ বছর পড়েছে, তা আমি আমার ৬০ বছরের জীবনে কোনোদিন দেখিনি। ধান পেকে কাঁটার সময় হয়েছে। কিন্তু গরমের কারণে কোনো শ্রমিক ধান কাটতে রাজি না হওয়ায় কৃষি বিভাগের সহযোগিতা চাইছিলাম। তাদের পরামর্শে এখন সন্ধ্যার পর থেকে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে ধান কাটতেছি, যদিও এতে বেশ সময় ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু আমার ফসল ঘরে তুলতে পারব, এতেই আমি খুশি।
সদর উপজেলার আজিজুল ইসলাম নামে একজন বলেন, রাতের বেলা তুলনামূলক গরম কম থাকে, সূর্যের তাপ থাকে না। গরমের কারণে শ্রমিকরা দিনের বেলা হিট স্ট্রোকের ভয়ে মাঠে ধান কাটার কাজ করতে চান না। তাই রাতের বেলা শ্রমিকদের নিয়ে জমির ধান কাটতেছি। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ধান কাটব।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সারাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে হিট এলার্ট জারি করা হয়েছে। এমন তাপের মধ্যে কৃষকরা মাঠে ধান কাটতে গেলে হিট স্ট্রোকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এজন্য কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রাতের বেলা টর্চ লাইট বা অন্য উপায়ে আলোর ব্যবস্থা করে যেন তারা ধান কাটেন। দিনের তুলনায় রাতে তুলনামূলক গরম কম হওয়ায় কৃষকরা স্বস্তিতে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষকরা রাতের বেলা ধান কাটা শুরু করে দিয়েছেন। মাঠের বোরো ধান পেকে যাওয়ায় গরমের কারণে উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তীব্র গরমের কারণে কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী রাতের বেলা যদি কৃষকরা ধান কাটতে পারেন, তাহলে তারা লোকসানেও পড়বেন না।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।