প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ২:২১
৫৫ শতক জমিতে সারিসারি দাঁড়িয়ে আছে আখ। আকারে লম্বা এই আখের বাইরের অংশ দেখতে কালো ও খয়েরি। দেশীয় আখের মতো হলেও এর কাণ্ড নরম। হাত দিয়েই উঠানো যায় ছোবড়া। রস ও মিষ্টি বেশি হওয়ায় এ জাতের আখ চাষে লাভও বেশি। তবে এই আখ চিনি উৎপাদনের জন্য নয় বরং চিবিয়ে খাওয়ার জন্য।
ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ ‘ব্ল্যাক সুগার কেইন’। অল্প খরচে অধিক লাভের আশায় এই আখ চাষ শুরু করেছেন জয়পুরহাটের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মহসীন আলী। জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের পাঁচগ্রাম মাঠে এই আখের চাষ করেছেন তিনি।
মহসীন আলী জানান, ইউটিউবে ভিডিও দেখে এই আখ চাষের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন তিনি। এরপর বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৮ হাজার টাকায় ফিলিপাইনের ‘ব্ল্যাক সুগার কেইন’ জাতের ৩০০টি আখ সংগ্রহ করেন। সেই আখ থেকে সাড়ে ৪ হাজার বীজ তৈরি হয়। আখের বীজ রোপণের আগে ৫৫ শতক জমিতে ৮০ ভাঁড় জৈব সার (গোবর), ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা ইউরিয়া, পটাশিয়াম ও ফসফেট দিয়ে জমি প্রস্তুত করেন। প্রস্তুত করা জমিতে তিনি সব বীজ রোপণ করেন। রোপণ করা বীজ কিছু নষ্ট হলেও প্রতিটি বীজ হতে ৪ থেকে ৭টি করে চারা জন্মায় এবং বাগানে ১৫ হাজার ফিলিপাইনের আখ হয়।
ফিলিপাইনের এই আখ চাষে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। ১৫ হাজার আখের মধ্যে ২ হাজার আখ প্রায় ২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি। আরও ১৩ হাজার আখ ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন মহসীন আলী।
তিনি বলেন, গত বছরের নভেম্বর মাসে বীজগুলো জমিতে রোপণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রতিটি আখ ৮ থেকে ১০ ফুট লম্বা হয়েছে। এই জাতের আখ ১২ থেকে ১৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। একবার বীজ রোপণ করলে তিন-চার বছর আর নতুন করে বীজ রোপণ করতে হয় না। কেটে ফেলা আখের গোড়া থেকে নতুন করে চারা গজায় এবং আখ হয়। ফিলিপাইনের কালো-খয়েরি রঙের আখ চাষের পর অনেকেই বীজ কেনার জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলে জানালেন মোহসীন।
আখের ৬ হাজার চারা হিসেবে কিনেছেন রফিকুল ইসলাম, দুলু মিয়া ও মিনারুল ইসলাম। তাদের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ কামারদহ ইউনিয়নের ফাঁসিতলা এলাকায়। রফিকুল ইসলাম বলেন, ৬ হাজার চারা ৩০ হাজার টাকা চেয়েছিল। আমরা ২৫ হাজার টাকা চুক্তিতে কিনেছি। শুনেছি এই আখ নরম, খেতে মিষ্টি, রসও বেশি। চিবিয়ে খাওয়ার জন্য এর চাহিদা আছে। তাই এবার প্রথম ফিলিপাইন জাতের আখ চাষ করার কথা ভাবছি। এজন্য তিনজন মিলে ২০ শতক করে ৬০ শতক জমিতে এই আখ রোপণ করবো।
কালাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, এই উপজেলায় এবারই প্রথম ফিলিপাইনের আখ চাষ হচ্ছে। তিনি এই আখ চাষ করে লাভবান হবেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে এবং তাকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই আখ চাষ করলে কৃষকরা লাভবান হবেন এবং নতুন নতুন উদ্যোক্তার সৃষ্টি হবে। এজন্য কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (জয়পুরহাট উপকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এই আখ চিবিয়ে খাওয়ার জন্য। এটি নরম আখ, রস বেশি। সব আখ থেকেই চিনি হবে। তবে ফিলিপাইনের এই আখ থেকে কতটুকু চিনি আসবে তার গবেষণা চলছে। তাছাড়া এই আখ সুগার মিল জোন এলাকায় রোপণ করলে চিবিয়ে খাওয়ার জন্য মানুষ কেটে নিয়ে যাবে। কৃষকেরা পাহারা দিয়েও কাজ হবে না। রস করে ও চিবিয়ে খাওয়ার জন্য এই আখে মানুষের চাহিদা বেশি।