আজ (শুক্রবার) ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১৭ বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০০৭ সালের এই দিনে উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানা ভয়াবহ সিডর ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল হাজার হাজার মানুষকে। তবে বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও পটুয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীসহ উপকূলীয় এলাকা এখনো সুরক্ষিত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান বাঁধগুলো এখন পর্যাপ্ত নয়। অনেক স্থানে বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে, আবার কোথাও বাঁধের উচ্চতা এত কম যে, তা জলোচ্ছ্বাসের সময় উপচে গিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবাহিত হয়, যা জীবন ও সম্পদের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে।
রাঙ্গাবালী উপজেলার দুর্গম চরনজির, চরকাশেম ও চরহেয়ারসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনও বাঁধ নির্মাণ হয়নি। এর ফলে এসব এলাকার বাসিন্দারা বারবার নদী ভাঙন ও জলোচ্ছ্বাসের শিকার হচ্ছেন। পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বাঁধগুলোর দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যেখানে একসময় ছিল ৪ থেকে ৬ মিটার উচ্চতার বাঁধ, এখন তা ২-৩ মিটার পর্যন্ত নেমে এসেছে। আবার কিছু বাঁধের অবস্থা এতই নাজুক যে, যেকোনো মুহূর্তে তা ভেঙে যেতে পারে।
এদিকে, পানির উন্নয়ন বোর্ডের পটুয়াখালী জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন জানান, উপকূলীয় এলাকার বাঁধগুলোর উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা চলছে। বর্তমানে বাঁধগুলোর উচ্চতা বাড়িয়ে ৭ থেকে ৭.৫ মিটার করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় কার্যকর হতে পারে। তবে, প্রকল্পটির অনুমোদন এখনও প্রক্রিয়াধীন এবং তা বাস্তবায়নে আরও কিছু সময় লাগবে।
প্রকৃতপক্ষে, রাঙ্গাবালীর উপকূলীয় এলাকার ১৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ এখন সুরক্ষিত নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৮৭ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত নির্মিত বাঁধগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একেবারে অকার্যকর হয়ে পড়ছে। এসব বাঁধের অবস্থার কারণে কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি হচ্ছে, এবং উপকূলীয় জনপদের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হচ্ছে। রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ, চালিতাবুনিয়া, ছোটবাইশদিয়া, কাউখালীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বাঁধগুলো ভেঙে গিয়েছে, এবং সেগুলো বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বাঁধের উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত করা না হলে বিপদ আরও বাড়বে। নেছার হাওলাদার, একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, "প্রতিবার বাঁধ ভেঙে আমাদের বসতভিটা বিলীন হয়। যদি টেকসই এবং উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা হতো, তাহলে আমাদের জীবন আরও নিরাপদ হত।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহরিয়ার জামান বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য বড় বিপদ। সিডরের মতো ঘূর্ণিঝড়ের ফলে শুধু জীবনই নয়, কৃষি উৎপাদনও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।"
অবশ্য, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা আশাবাদী যে, ভবিষ্যতে উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপকূলীয় বাঁধগুলোর উঁচু করা এবং সেগুলোর টেকসই করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে এই প্রকল্পগুলো অনুমোদিত হলে বাস্তবায়নে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, যা এখনও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ এবং উপকূলীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।