ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রাচীন জনপদ সরাইল ঐতিহ্য, কীর্তি ও গৌরবে ভরপুর একটি অঞ্চল। মধ্যযুগে এটি ঈসা খাঁর রাজধানী ছিল এবং সমতট জনপদের অংশ হিসেবে সুলতানী ও মোগল আমলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শের শাহের সময় পরগনা ব্যবস্থার প্রচলনের সঙ্গে সরাইল পরগনা একটি প্রশাসনিক শক্ত কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই ঐতিহ্যময় জনপদ সাম্প্রতিক সময়ে বারবার গ্রাম্য দাঙ্গা, গোষ্ঠীগত বিবাদ, ঝগড়া ও সংঘর্ষে কলঙ্কিত হচ্ছে বলে মনে করেন এলাকার সুধীসমাজ।
স্থানীয়দের অভিযোগ—বাড়ির সীমানা, জমিজমা, গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, গাড়ি ভাড়া অথবা তুচ্ছ বিষয় নিয়েও দাঙ্গা হচ্ছে। সংঘর্ষের সময় বসতবাড়ি লুটপাট, বাড়িঘর ভাঙচুর, বৃদ্ধ-শিশু কেউই রেহাই পাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও হামলার শিকার হন। এসব ঘটনায় নিরপরাধ সাধারণ মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে—হারাচ্ছে ঘরবাড়ি ও সম্পদ।
সুধীসমাজের দাবি, এসব দাঙ্গার পেছনে রয়েছে কিছু গ্রাম্য সর্দার-মাতব্বর, যারা উভয় পক্ষকে উসকানি দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেন। তাদের কেউ আদালতের ভয় দেখান, কেউ থানার। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়।
মো. রুবেল মিয়া বলেন, “শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে উস্কানিদাতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি।”
মো. মনিরুল হক মনে করেন, “একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রয়োজন—কারা এসব গোষ্ঠীগত ঝগড়া সৃষ্টি করছে, তা বের করতে হবে।”
মো. পারভেজ মিয়া বলেন, “উসকানিদাতাদের আইনের আওতায় আনতে পারলেই পরিস্থিতি ভালো হবে।”
সরাইল উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সিনিয়র সভাপতি মো. আরিফুল ইসলাম সুমন বলেন, “দাঙ্গার মদদদাতাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।”
সমাজসেবক মো. মাহবুবুর রহমান বকুল মিয়া জানান, “দাঙ্গা থামাতে হলে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সমাজপতিরা সঠিক ভূমিকা পালন করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”
সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবী নুরুজ্জামান লস্কর তপু বলেন, “প্রত্যেক এলাকায় কিছু দাঙ্গাবাজ চিহ্নিত আছে। তাদের উসকানিতে সংঘর্ষ ঘটে, লুটতরাজ হয়। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা শক্ত ভূমিকা রাখলে দাঙ্গা নির্মূল করা সম্ভব।”
উল্লেখ্য, শনিবার (১৫ নভেম্বর) শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামে জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে একই গোষ্ঠীর দুই পক্ষের সংঘর্ষে এলাকা রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। মাগুরহাটি এলাকায় হওয়া সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী নামতে হয়। ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়। ৫৮ জনের নামে মামলা ও ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এলাকাবাসী মনে করেন, সরাইলের হাজার বছরের গৌরব রক্ষায় এখনই প্রয়োজন প্রশাসন, জন প্রতিনিধি, সমাজপতি ও নাগরিকদের সমন্বিত উদ্যোগ।