'আজকে এ রকম একটি অবস্থায় আমাদের সমাজ কোথায় আছে, আমরা কোথায় আছি? আমরা আজকে উন্নয়েনর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুশাসনের কথা বলছি। আমরা যখন এদিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তখন সমাজে কেন এত অধঃপতন? আমাদের অবশ্যই তা বের করতে হবে। 'হত্যা, খুন, ধর্ষণ আজকে যেভাবে সমাজকে গিলে ধরেছে এর থেকে মুক্তির পথ কি? আজকের কুমিল্লার দেবিদ্বারের ঘটনা আরও ভয়াবহ। ঘাতক মা, ছেলে সহ একই পরিবারের ৪ জনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। জনগন আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে ঘাতককে হত্যা করেছে। এটা অশনিসংকেত বলা যায়। জনগন যদি রাষ্ট্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপরে আস্থা হারিয়ে ফেলে তখন সমাজের রুপ ভিন্নতর জায়গায় চলে যেতে পারে।
যে দেশে এজাতীয় একটি নির্বাচন করে সংসদ গঠিত হতে পারে এবং এ জাতীয় নির্বাচন করে সরকার গঠন করে জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় আদৌ কি সেটা করা সম্ভব?? যে নির্বাচনের নামে প্রহসন করে জনগনের আস্থা হারালে জনগন কেন তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসবে?? আর জনগনের সহায়তা ছাড়া কোন দেশে সুশাসন নিশ্চিত করা যায় না। একারণে আজকে জনগনের মুখে শ্লোগান উঠেছে "হত্যা খুন ধর্ষণ মুল কারন অবৈধ নির্বাচন।" আজকের এই সামাজিক অস্থিরতা হত্যা, খুন, ধর্ষণকে শুধুমাত্র উন্নয়ন এর বুলি দিয়ে দমন করা যাবে না আর যেখানে জনগন উন্নয়নকে ইতিবাচক বিবেচনা না করে বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যাপক লুটপাটকে প্রাধান্য বিবেচনা করে এটাকে নেতিবাচকভাবেই মুল্যায়ন করছে। জনগন বলতে শুরু করেছে তারা এই লুটপাটের উন্নয়ন চায় না তারা তাদের সন্তানদের জানমাল ইজ্জৎ এর নিরাপত্তা চায়। জনগন বাক স্বাধীনতা ফিরিয়ে পেতে চায়। জনগন তাদের গনতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে পেতে চায়।
দেশে ঋণের বোঝা বাড়ছে। আজ যে শিশুটি জন্ম নেবে, তার মাথায় ৬৭ হাজার ২৩৩ টাকা ঋণের দায় চাপবে। কারণ বর্তমানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু এ পরিমাণ ঋণ রয়েছে। গত ১ বছরে যা বেড়েছে প্রায় ৭ হাজার ২৩৩ টাকা। আগামী ১ বছরে তা আরও ৫ হাজার ৫৪৭ টাকা বাড়বে। ফলে ওই সময়ে মাথাপিছু ঋণের স্থিতি দাঁড়াবে ৭২ হাজার টাকা। এ কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরেও প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রেখেছে সরকার। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে মানুষের মাথাপিছু বরাদ্দ ৩২ হাজার ৩৫৫ টাকা। এ হিসাবে ঋণ মাথাপিছু বরাদ্দের দ্বিগুণেরও বেশি। ঋণ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কর আদায় করতে না পারায় সরকারকে বেশি ঋণের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। আর এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, বুদ্ধিজীবীদের মানুষকে পথ দেখানোর কথা। কিন্তু তাঁরা চামচাগিরি করেন, বিশ্বাসঘাতকতা করেন, দায়িত্ব পালন না করে উল্টোটা করেন, এটাই বাংলাদেশে হচ্ছে,।আমরা উন্নতি অনেক করেছি, দৃশ্যমান উন্নতি আছে, অবকাঠামোগত উন্নতি আছে, জিডিপি পরিসংখ্যান আছে, বিদেশি প্রশংসা আছে। কিন্তু ভেতরের দুর্দশা হচ্ছে শিশুর। যে শিশু খেলতে চেয়েছিল, খেলতে গিয়ে ধর্ষিত হলো, খেলতে গিয়ে প্রাণ হারাল। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের বাস্তবতা। এই বাস্তবতাই প্রতিফলিত হচ্ছে, এই রাষ্ট্র নৃশংস, এই রাষ্ট্র আমলাতান্ত্রিক। এই রাষ্ট্র কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র, মন্তব্য করে বলেন ‘তবে শুধু কর্তৃত্ববাদী বললেই হবে না, এই ব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক, পুঁজিবাদী ও চূড়ান্ত। এই রাষ্ট্র ফ্যাসিবাদী। ক্ষমতা যখন একজনের হাতে চলে যায়, সেটা আমরা পাকিস্তানের আমলে দেখেছি, ৪৬ বছর ধরে বাংলাদেশের ইতিহাসে দেখছি। এই রাষ্ট্রের আমলাতান্ত্রিক, পুঁজিবাদী চরিত্র আরও বিকশিত হয়েছে, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আর সেই জন্যই আজকের দুর্দশা হচ্ছে, আমরা কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না।
সারাদেশে নারী ও শিশুদের ওপর পাশবিক নির্যাতন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা প্রত্যেক বিবেকবান মানুষকে যখন উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। জোর-জবরদস্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে রাখা, গুম-খুন-নির্যাতন চালিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং চুরি-দুর্নীতি-লুটপাটের মাধ্যমে ধন-সম্পদের মালিক হওয়ার জন্যে শাসকগোষ্ঠীর বেপরোয়া হয়ে ওঠা- গোটা সমাজদেহে বিষাক্ত প্রভাব ফেলছে। রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও শাসকগোষ্ঠীর নৈতিকতাবর্জিত কর্মতৎপরতা গোটা সমাজের নৈতিকতায় ধস নামাচ্ছে। ফ্যাসিবাদী শাসন সমাজে নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটায়, জোর-জবরদস্তি-নৃশংসতা তথা পাশবিক আচরণ উস্কে দেয়। ফলে, যতোই দিন যাচ্ছে, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ সামাজিক অবক্ষয় ততো বাড়ছে। উন্নত রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সামাজিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।