প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২১, ১৫:৪১
বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর অন্যতম সংস্থা বাংলাদেশ পুলিশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এ সংস্থা যাবতীয় অপরাধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধের পাশাপাশি জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় নিবেদিত। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নামে ঢাকায় গণহত্যা শুরু করলে পুলিশ বাহিনীই রাজারবাগে হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
সবশেষ মহামারী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংকটেও দেশবাসী সর্বাগ্রে দেখছে পুলিশকে।
দীর্ঘ পথচলার পর থেকে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি গত এক দশকে জঙ্গিবাদ দমন এবং নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ পুলিশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। সরকারের অগ্রাধিকার হিসেবে গোয়েন্দা কার্যক্রম ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযানেও বাহিনীটির রয়েছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। মাদকের বিস্তার রোধ ও সাইবার ক্রাইমের মতো অপরাধ দমনেও পুলিশ যথেষ্ট সাফল্যের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশ শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুপরিচিত। জাতিসংঘের আওতায় পৃথিবীর বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা।
শুরুর কথাঃ
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর এ দেশের পুলিশের নাম দেয়া হয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল পুলিশ। পরে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত এই নামেই পুলিশের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।
মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকাঃ
মহান মুক্তিযুদ্ধে অন্য পেশাজীবীদের মতো পুলিশ সদস্যরাও ঝাঁপিয়ে পড়েন। দেশ মাতৃকার মুক্তি সংগ্রামে শহীদ হন বাহিনীটির একজন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল, বেশ কয়েকজন এসপিসহ প্রায় সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস থেকেই প্রদেশের পুলিশ বাহিনীর ওপর কর্তৃত্ব হারিয়েছিল পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার। তৎকালীন পুলিশ সদস্যদের অনেকেই প্রকাশ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কাল রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত বাতিল ‘পয়েন্ট ৩০৩’ রাইফেল দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তারাই। তাদের এ প্রতিরোধই দেশবাসীর কাছে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরুর বার্তা পৌঁছে দেয়। পরে পুলিশের এই সদস্যরা ৯ মাসজুড়ে দেশব্যাপী গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১ হাজার ২৬২ জন শহীদ পুলিশ সদস্যের তালিকা স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রে উল্লেখ পাওয়া যায়।
ঝিনাইদহের তৎকালীন সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার মাহবুবউদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে ঐতিহাসিক গার্ড অব অনার প্রদান করেন।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে পুলিশঃ
স্বাধীনতার পর বাহিনীটির নামকরণ হয় ‘বাংলাদেশ পুলিশ’। এই বাহিনী পৃথিবীর অন্যান্য দেশের পুলিশ বাহিনীর মতো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। এদেশে পুলিশের চিরাচরিত চরিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে।
শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা আর অপরাধ প্রতিরোধ বা দমনই নয়, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গত এক দশকে জঙ্গিবাদ দমন এবং নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ পুলিশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।
ইউনিটঃ
বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ পুলিশকে ভাগ করা হয়েছে কতগুলো ইউনিটে। সেগুলো হলো- পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, রেঞ্জ পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি), আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব),
রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি), ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ইন্টারনাল ওয়েবসাইট (পিআইও), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ট্রেনিং ইনস্টিটিউটস, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও নৌ-পুলিশ।
রেঞ্জ ও জেলা পুলিশঃ
রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য মেট্রোপলিটন শহরগুলো ছাড়া সমগ্র পুলিশ বাহিনীকে আলাদা রেঞ্জে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি রেঞ্জের নেতৃত্বে রয়েছেন একজন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (ডিআইজি)। তার অধীনে থাকেন জেলা পুলিশের নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তারা।
বর্তমানে আটটি প্রশাসনিক বিভাগে আটটি রেঞ্জ এবং রেলওয়ে ও হাইওয়ে পুলিশ নামে দুটি স্বতন্ত্র রেঞ্জ আছে। জেলা পুলিশের অধিকর্তা হলেন সুপারিটেনডেন্ড অব পুলিশ (এসপি)।
প্রতিটি জেলায় সুপারিটেনডেন্ড অব পুলিশকে সহযোগিতার জন্য এক বা একাধিক অতিরিক্ত সুপারিটেনডেন্ড অব পুলিশ (এএসপি) পদায়ন করা হয়।
জেলাগুলোতে পুলিশ এক বা একাধিক সার্কেলে বিভক্ত থাকে। সার্কেলের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে একজন এএসপি দায়িত্ব পালন করেন।
প্রতিটি পুলিশ সার্কেল কয়েকটি থানার সমন্বয়ে গঠিত। একজন পুলিশ পরিদর্শক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার অধীনে কয়েকজন সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। দেশের আইন অনুযায়ী একমাত্র সাব-ইন্সপেক্টর পদধারী অফিসারই কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিতে পারেন।
প্রতিটি রেঞ্জের অধীনে নিজস্ব রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স (আরআরএফ) এবং জেলা পুলিশের অধীনে নিজস্ব স্পেশাল আর্মড ফোর্স (এসএএফ) জরুরি অবস্থা, বেআইনি সমাবেশ বা দাঙ্গা মোকাবিলার কাজ করে। এসপি বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে তাদের মোতায়েন করা হয়। সশস্ত্র কনস্টেবলদের এই বাহিনী সাধারণ পুলিশিং কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ব্যবহৃত হয় না।
তাদের ভিআইপিদের নিরাপত্তা রক্ষা, মেলা, উৎসব, খেলাধুলা, নির্বাচন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশেষ অবস্থায় কাজ করেন। ছাত্র বা শ্রমিক অসন্তোষ, সংগঠিত অপরাধ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানেও তাদের ব্যবহার করা হয়।
আটটি বিভাগীয় পুলিশ রেঞ্জঃ
ঢাকা রেঞ্জ, চট্টগ্রাম রেঞ্জ, খুলনা রেঞ্জ, রাজশাহী রেঞ্জ, সিলেট রেঞ্জ, বরিশাল রেঞ্জ, রংপুর রেঞ্জ ও ময়মনসিংহ রেঞ্জ।
মেট্রোপলিটন পুলিশঃ
মেট্রোপলিটন আইনের অধীনে পুলিশ কমিশনারেট পদ্ধতি অনুসারে ময়মনসিংহ বাদে অন্য সাতটি বিভাগীয় ও গাজীপুর শহরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠন করা হয়। ১৯৭৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) পুলিশ গঠিত হয়। পরবর্তীতে অন্য ছয়টি বিভাগীয় শহর এবং গাজীপুরে পৃথক মেট্রোপলিটন পুলিশ ফোর্স গঠিত হয়। মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন একজন পুলিশ কমিশনার।
বিশেষ নারী পুলিশ বাহিনী
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে প্রথমবারের মতো নারী সদস্যরা যোগদান করেন ১৯৭৮ সালে। ডিএমপির আরও একটি বিশেষ নারী পুলিশ ইউনিট কার্যক্রম শুরু করে ২০০৮ সালে। নারীদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধ সঠিকভাবে তদন্ত এবং তাদের গ্রেফতারে নারী পুলিশ বাহিনী তৈরি করা হয়েছে।
বিশেষ নারী পুলিশ বাহিনীতে প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন ২৪ জন নারী।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)ঃ
সন্ত্রাসবাদ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ মোকাবিলার উদ্দেশ্যে ডিএমপির একটি বিশেষ শাখা এটি। ২০১১ সালের আগস্টে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে ‘কাউন্টার সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশ ব্যুরো’ নামে একটি বিশেষ ইউনিট গঠনের সুপারিশ করে।
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে এ সংক্রান্ত সুপারিশ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০১৫ সালে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা বাড়লে এ ইউনিটের চাহিদা বাড়ে। ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ৬০০ জনকে নিয়ে সিটিটিসি প্রতিষ্ঠা হয়।
২০১৭ সালের মার্চে সীতাকুণ্ডে সিটিটিসি পরিচালিত অভিযানে দুই জঙ্গি নিহত হয়। ওই বছরের ২৫ মার্চ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম প্যারা-কমান্ডো ব্যাটালিয়ন পরিচালিত ‘অপারেশন টুইলাইটকে’ সহায়তা করে পুলিশের এই ইউনিট।
সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক, সাইবার অপরাধ, ড্রাগ, চোরাচালান, সন্ত্রাসী অর্থায়ন এবং অন্য যেকোনো আন্তর্জাতিক অপরাধ সম্পর্কিত তথ্য নাগরিকদের কাছ থেকে সংগ্রহের জন্য সংস্থাটি ‘হ্যালো সিটি’ নামে একটি অ্যাপ উন্মুক্ত করে।
অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)ঃ
এটিইউ হচ্ছে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে গঠিত বাংলাদেশ পুলিশের একটি শাখা। কাউন্টার টেরোরিজমের জাতীয় ইউনিট হিসেবে এটি কাজ করে। ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দেশের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি হামলা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এর যাত্রা শুরু হয়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এটিইউর কার্যক্রম শুরু হয়।
এটিইউতে একজন অ্যাডিশনাল আইজি, একজন ডিআইজি, দুজন অতিরিক্ত ডিআইজি, পাঁচজন এসপি, ১০ জন অ্যাডিশনাল এসপি, ১২ জন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এবং ৭৫ জন ইন্সপেক্টর, ১২৫ জন সাব-ইনস্পেক্টর এবং বাকি পদগুলো কনস্টেবলের।
সোয়াতঃ
স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্স টিম (সোয়াত) ডিএমপির আরেকটি কৌশলী ইউনিট, যা ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশেষ অস্ত্র ও কৌশল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার অধীনে পরিচালিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সোয়াত টিমের আদলে তাদেরই প্রশিক্ষণ ও আধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত হয়ে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে সোয়াত।
ডিএমপি কমিশনারের সরাসরি নির্দেশে পরিচালিত হয় এই ইউনিট। খুবই কঠোর পদ্ধতিতে এখানে নিয়োগ দেয়া হয়। কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের ওপর এতে বিশেষ নজর দেয়া হয়। শারীরিক উচ্চতা, সুস্থতা, মানসিক দৃঢ়তা ও খাটতে পারা ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পায়।
বিশেষ শাখা (এসবি)ঃ
জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজ করে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। এসবি প্রধানের অতিরিক্ত পুলিশ পরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি)/মেজর জেনারেল র্যাংক, যিনি বাংলাদেশ পুলিশ থেকে আসেন এবং সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করেন। এজেন্সিটির প্রায় ৬৪টি জেলাভিত্তিক কার্যালয় রয়েছে, তাকে জেলা বিশেষ শাখা (ডিএসবি) বলা হয় এবং অনেক উপজেলা/থানা এলাকায়ও এর কার্যালয় রয়েছে। এ শাখার সব সদস্য বাংলাদেশ পুলিশ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত।
এসবির ১২টি বিভিন্ন উইং রয়েছে যার মাধ্যমে এটি সরকারের নির্দেশনায় কাজ করে। এ সংগঠনের দেশের ভেতরে এবং বাইরে কাজ করার সক্ষমতা রয়েছে।
ইমিগ্রেশন পুলিশঃ
বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসা এবং বিদেশগামী দেশি-বিদেশি ব্যক্তিদের ইমিগ্রেশন ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিষেবা দেয় পুলিশের এই ইউনিট।
অপরাধ অনুসন্ধান বিভাগ (সিআইডি)ঃ
অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষ শাখা। সিআইডি সন্ত্রাসবাদ, খুন এবং সংগঠিত অপরাধের তদন্ত করে। এটি ফরেনসিক কার্যক্রমেও সাহায্য করে। আদালতে চলমান মামলার কার্যক্রম তদন্ত করা এ বিভাগের প্রধান কাজ।
এছাড়া যেসব অপরাধের বিশেষ তদন্ত প্রয়োজন সেখানেও কাজ করে সিআইডি। তদন্ত ছাড়াও তারা বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনগুলোকে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে থাকে তারা। রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়।
১৮৬১ সালের ৫ নম্বর ধারার পর থেকে ব্রিটিশ ভারতের পুলিশ ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হয়। সে সময় পুলিশের একটি গোয়েন্দা শাখা খোলার জন্য নিয়মিত বিরতিতে প্রস্তাব আসতে থাকে। ১৯০২-০৩ সালে পুলিশ কমিশনার প্রত্যেক প্রদেশের জন্য অপরাধ তদন্ত বিভাগ গড়ে তুলতে সুপারিশ করে। তার সুপারিশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। কমিশন প্রত্যেক প্রদেশের জন্য পুলিশের একজন ডেপুটি ইন্সপেক্টরের অধীনে অপরাধ অপরাধ অনুসন্ধান বিভাগ গড়ে তোলার সুপারিশ করে। এটি রেলওয়ে পুলিশ ও ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যুরো তত্ত্বাবধান করে। বিশেষায়িত ঘটনাগুলো সিআইডির কাছে হস্তান্তরিত হয়। সবশেষে ১৯০৫ সালের ২১ মার্চ তৎকালীন ভারত সরকার কমিশনের প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং ১৯০৭ সালে প্রত্যেক প্রদেশে সিআইডি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলায় প্রথমবারের মতো সিআইডি ১৯০৭ সালের ১ এপ্রিল সিডব্লিউসি’র মাধ্যমে সিআইডি পরিচালিত হয়।
সিআইডি সাধারণত ডাকাতি, জাল নোট ও স্ট্যাম্প জালিয়াতি, মাদক ও বিষ সম্পর্কিত, প্রতারণা, ভোগদখলের জন্য খুন, ইন্স্যুরেন্স প্রতারণা, মাদক সম্পর্কিত অপরাধ, মুক্তিপণের জন্য অপহরণ, প্রাচীন বস্তু পাচার, মানবপাচার ও ব্যাংক জালিয়াতিসহ খুনের রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্ত করে।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)ঃ
এটি বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত একটি দল। এর সদর দফতর ঢাকায়। ১৯৭৬ সালে ৯ ব্যাটালিয়নের একটি রিজার্ভ বাহিনী গঠন করে ‘আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ নাম দেয়া হয়। এই ব্যাটালিয়নের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপি পুলিশ প্রধানকে সাহায্য করেন।
বর্তমানে মোট ১১টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে আর্মড পুলিশের। নদীপথ বা দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলসহ সব জায়গায়ই এই ব্যাটালিয়ন কাজ করছে। বিশেষ নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা ব্যাটালিয়নের রয়েছে দুটি ব্যাটালিয়ন। ২০১০ সালের জুনে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার সার্বিক দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সেখানকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং যাত্রী হয়রানি রোধে বিশেষ ভূমিকা রাখছে তারা। ২০১১ সালের ২১ জুন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন প্রথম নারী ইউনিট চালু করে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসানে জঙ্গি আক্রমণের পর বাংলাদেশের শহর এলাকায় কমান্ডো ইউনিট গঠন করার জন্য সরকারের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা গার্ড সেন্টারে প্রশিক্ষণ নেন দলটির কর্মকর্তারা।
বিমানবন্দরে বিধ্বংসী কোনো কর্মকাণ্ড, অবাঞ্ছিত ও অননুমোদিত ব্যক্তির প্রবেশ, যাত্রী লটবহর চুরি ও হয়রানি প্রতিরোধের পাশাপাশি পার্কিং এলাকা, পরিবাহক বেল্ট, বিমান থাকার স্থান, পিচ এলাকাসহ বিমানবন্দরের ভেতরে বিভিন্ন এলাকায় ভিডিও প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তথ্য ও সম্ভাব্য অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহ, অনুসন্ধান করে এপিবিএন। এছাড়া বিমানবন্দরের ভেতরে সাধারণ পরীক্ষণ ও সন্দেহজনক ব্যক্তির ভ্রমণ নথি, লটবহর বা শরীরের অনুসন্ধানসহ অপরাধমূলক ঘটনার তদন্তেও কাজ করে তারা। এছাড়া অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে নিরাপত্তা ও সমন্বয় সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য এবং জঙ্গি আক্রমণ রোধেও কাজ করে এপিবিএন।
বিশেষ নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা ব্যাটালিয়ন (এসবিপিএন)ঃ
২০১২ সালে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিদেশি রাষ্ট্রীয় অতিথিদের নিরাপত্তা রক্ষায় বিশেষ নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা ব্যাটালিয়ন (এসপিবিএন) নামে পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক। তার নিয়ন্ত্রণে একজন উপ-মহাপরিদর্শক এই বাহিনী পরিচালনা করেন। প্রাথমিকভাবে দুটি প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন দিয়ে এই বাহিনী যাত্রা শুরু করে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র’্যা)বঃ
পুলিশের ‘এলিট ফোর্স’ হিসেবে পরিচিত র্যাব দেশের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনের জন্য গঠিত একটি চৌকস বাহিনী। পুলিশ সদর দফতরের অধীনে পরিচালিত এই বাহিনী ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ গঠিত হয় এবং একই বছরের ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ) তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশ পুলিশের পাশাপাশি সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, আনসার ও সিভিল প্রশাসনের সদস্যদের সমন্বয়ে র্যাব গঠিত হয়। আইজিপির নিয়ন্ত্রণে একজন মহাপরিচালক এই বাহিনী পরিচালনা করেন। র্যাবের অন্যতম সাফল্য হলো জঙ্গি বাহিনী বিশেষ করে জামায়াতুল মুজাহিদীনের (জেএমবি) নেটওয়ার্ক ধ্বংস করে দেয়া।
রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি)ঃ
রেলওয়ে পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশের একটি অন্যতম প্রাচীন বিশেষায়িত ইউনিট। এটি ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। রেলওয়ে পুলিশ তার অধিক্ষেত্রে জেলা পুলিশের মতোই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন, তদন্ত ও অন্যান্য পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। রেলওয়ে পুলিশ রেঞ্জের প্রধান হলেন একজন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (রেলওয়ে পুলিশ) পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা। এ রেঞ্জের অধীনে দু’টি রেল জেলা আছে, এর একটি হলো সৈয়দপুর অন্যটি চট্টগ্রাম। একজন রেলওয়ে পুলিশ একটি সুপারিটেনডেন্টের (এসআরপি) অধীনে রেল জেলা পুলিশের সব ধরনের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।
শিল্পাঞ্চল পুলিশঃ
পুলিশের এ বিশেষায়িত ইউনিট ‘শিল্প পুলিশ’ বা ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ’ নামেও পরিচিত। শিল্প এলাকায় অশান্তি প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে সম্ভাব্য শ্রম অসন্তোষ মোকাবিলাই তাদের প্রধান কাজ।
২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে শিল্প পুলিশ গঠনের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা দেন। ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে শিল্পাঞ্চল পুলিশ।
এ ইউনিটের কার্যক্রম পরিচালিত হয় অনেকটা গোয়েন্দা পুলিশের আদলে। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শ্রমিক অসন্তোষের কারণ, মালিকপক্ষের শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা, কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধন, শ্রমিকদের বেতন নিয়মিত দেয়া হচ্ছে কি-না এবং কী কারণে মালিকরা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছেন না সেসব বিষয়ে তাদের গোয়েন্দা ইউনিট আগাম তথ্য সংগ্রহ করে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের কার্য অঞ্চলঃ
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-১, আশুলিয়া, ঢাকা। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-২, গাজীপুর। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৩, চট্টগ্রাম। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৪, নারায়ণগঞ্জ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৫, ময়মনসিংহ ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৬, খুলনা।
হাইওয়ে পুলিশঃ
মহাসড়ক নিরাপদ রাখা এবং যানজটমুক্ত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সরকার হাইওয়ে পুলিশ গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলে ২০০৫ সালে হাইওয়ে পুলিশ যাত্রা শুরু করে। হাইওয়ে পুলিশ রেঞ্জের প্রধান কর্মকর্তা হলেন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (হাইওয়ে পুলিশ)। হাইওয়ে পুলিশ রেঞ্জের অধীনে দু’টি হাইওয়ে পুলিশ উইং রয়েছে। ইস্টার্ন উইংয়ের সদর দফতর কুমিল্লায় ও ওয়েস্টার্ন উইংয়ের সদর দফতর বগুড়ায় অবস্থিত। প্রতিটি উইংয়ের নেতৃত্বে আছেন একজন সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ (হাইওয়ে)। হাইওয়ে পুলিশের অধীনে রয়েছে ৬ হাজার ৪৮৭ কিলোমিটার হাইওয়ে এবং ৪ হাজার ১৬৫ কিলোমিটার স্থানীয় সড়ক।
পুলিশ অভ্যন্তরীণ ওভারসাইট (পিআইও)ঃ
সারাদেশে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের কার্যক্রম নজরদারি ও তাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারির জন্য পুলিশ অভ্যন্তরীণ ওভারসাইট নামে একটি বিশেষায়িত বিভাগ কাজ করে। ২০০৭ সালে এই বিভাগটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সদর দফতরের একজন সহকারী মহাপুলিশ পরিদর্শক এই বিভাগের প্রধান এবং তিনি সরাসরি আইজিপির কাছে রিপোর্ট দেন। দেশের প্রতিটি পুলিশ ইউনিট পিআইওর সরাসরি নজরদারির আওতাধীন। পিআইওর এজেন্টরা পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সংশ্লিষ্ট ইউনিটের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সারাদেশে ছড়িয়ে আছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশঃ
২০০৯ সালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য গঠিত হয় পর্যটন পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা জানান, শিগগিরই পর্যটন পুলিশের পরিধি বাড়িয়ে দেশের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও এর কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যটন পুলিশ কাজ করে জেলা পুলিশের অধীনে।
২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ট্যুরিস্ট পুলিশের পূর্ণাঙ্গ যাত্রা শুরু হয়। কক্সবাজার, টেকনাফ, কুয়াকাটা, সিলেটের জাফলং, বিছানাকান্দি, মাধবকুণ্ড, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, সোনারগাঁ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ও জাতীয় চিড়িয়াখানাসহ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, নাটোর, নওগাঁ, বগুড়া ও সুন্দরবন এলাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ২০১৭ সালে মোবাইল অ্যাপ ‘হ্যালো ট্যুরিস্ট’ চালু করে পর্যটন শিল্পে ট্যুরিস্ট পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
নৌ-পুলিশঃ
মৎস্য ও জলজ সম্পদ রক্ষায় দেশের অর্থনীতিতে নৌ-পুলিশ বড় অবদান রাখছে। পুলিশের এ শাখা সাধারণত অভ্যন্তরীণ ও সীমান্তবর্তী সামুদ্রিক অঞ্চলের নিরাপত্তায় কাজ করে। এছাড়া নৌ-পরিবহনে নিয়মিত টহল ও নিরাপত্তার কাজও করে পুলিশের এই শাখা। ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর সরকারি এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নৌ-পুলিশ কমিশন করা হয়েছিল।
গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)ঃ
প্রত্যেক মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং জেলা পুলিশের নিজস্ব গোয়েন্দা শাখা রয়েছে। ডিবি একটি অত্যন্ত দক্ষ, বাস্তবধর্মী ও প্রযুক্তিনির্ভর বিশেষায়িত শাখা।
ট্রাফিক পুলিশঃ
ট্রাফিক পুলিশ ছোট শহরগুলোতে জেলা পুলিশের অধীনে এবং বড় শহরগুলোতে মেট্রোপলিটন পুলিশের অধীনে কাজ করে। এই শাখা ট্রাফিক আইন-কানুন মেনে চলতে যানবাহনগুলোর চালকদের বাধ্য করে ও অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়।
‘জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯’ঃ
৯৯৯ জরুরি সেবা বাংলাদেশ পুলিশের অধীনে পরিচালিত একটি কল সেন্টার। এখান থেকে জরুরি পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেয়া হয়। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ৯৯৯ কল করে এসব সেবা নেয়া যায়। সর্বস্তরের নাগরিকদের জরুরি সেবা দেয়ার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পুলিশ এই কল সেন্টার সেবাটি চালু করে। সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা চালু রয়েছে এ কল সেন্টার। ৯৯৯ একটি টোল ফ্রি নম্বর। এতে কল করার জন্য কলারকে কোনো টাকা খরচ করতে হয় না।
বর্তমানে এই কল সেন্টারে শতাধিক এজেন্ট জরুরি সেবা প্রদানে কাজ করছে। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স সেবা ও পশু-পাখি উদ্ধারসহ অন্যান্য সেবা দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
কমিউনিটি পুলিশঃ
কমিউনিটি পুলিশিং হচ্ছে অপরাধ সমস্যা সমাধানে পুলিশ ও জনগণের যৌথ অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার একটি নতুন পুলিশিং দর্শন। দেশে পুলিশিং কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কার্যকরভাবে অপরাধ প্রতিরোধের জন্য কমিউনিটি পুলিশিং ধারণার প্রবর্তন করা হয়।
কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা কমিউনিটির সদস্য, সমাজের বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং পুলিশের অংশীদারত্বের ভিত্তিতে অপরাধ প্রতিরোধ ও জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কমিউনিটি পুলিশিং মূলত একটি প্রতিরোধমূলক পুলিশি ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় অপরাধের কারণগুলো অনুসন্ধান করে সেগুলো দূর করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। অপরাধের কারণগুলো দূর করা যেহেতু পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়, তাই এ কাজে অন্যান্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের যাবতীয় কর্মকাণ্ড অপরাধ প্রতিরোধ তথা অপরাধ যাতে ঘটতে না পারে সেই লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার মাধ্যমে পুলিশ জনগণকে নিজেরাই যাতে নিজ নিজ এলাকার অপরাধগুলো প্রতিরোধ করতে পারে তার জন্য জনগণকে আইনি পরামর্শ দেয়া, অপরাধ সম্পর্কে সচেতন করা, অপরাধকর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য বা পরামর্শ দেয়া ইত্যাদির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করে।’
প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানঃ
রাজশাহীর সারদায় অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি দেশের একমাত্র পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এটির অবস্থান চারঘাট উপজেলা সদর থেকে এক মাইল দূরে পদ্মার পাড়ে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে মেজর এইচ. চ্যমেই নামে একজন সামরিক অফিসার এই একাডেমির প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি একাডেমির স্থান অনুসন্ধানের জন্য পদ্মা নদী দিয়ে স্টিমারে যাওয়ার সময় চারঘাটে স্টিমার থামান। সেখানকার পারিপার্শ্বিক মনোরম পরিবেশে বিশেষ করে বিশাল আম বাগান, সুউচ্চ বড় বড় কড়ই গাছ ও প্রমত্তা পদ্মার বিশালতা দেখে তিনি মুগ্ধ হন। এরপর ফিরে গিয়েই তিনি সেখানে পুলিশ একাডেমির স্থান নির্ধারণের জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে প্রস্তাব পেশ করেন। ব্রিটিশ সরকার তার সুপারিশ গ্রহণ করে এবং ১৯১২ সালের জুলাই মাসে সারদায় পুলিশ একাডেমির উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে এই পুলিশ একাডেমি দেশের পুলিশ প্রশাসনকে গতিশীল ও সচল রাখার জন্য সমসাময়িক ধ্যান-ধারণায় বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। এর আয়তন ১৪৫ দশমিক ৬ একর। বর্তমানে আরও ১০০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।
পুলিশ স্টাফ কলেজঃ
২০০০ সালে রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ পুলিশের একমাত্র স্টাফ কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারঃ
টাঙ্গাইল, রংপুর, খুলনা ও নোয়াখালীতে রয়েছে পুলিশের ট্রেনিং সেন্টার।
গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ স্কুলঃ
১৯৬২ সালে ঢাকায় গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাহিনীটির প্রধান (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘পুলিশ জনগণকে নিয়ে কাজ করে। জনগণ নিয়ে কাজ করতে গেলে পুলিশে আচরণগত পরিবর্তন আনতে হবে। পুলিশের এই জায়গায় পরিবর্তন আনার জন্য গুণগত কাজ করে যাচ্ছি। পরিবর্তন অনেক সময় ও কষ্টসাধ্য বিষয়, তবে পরিবর্তনের সেই প্রয়াস আমরা শুরু করেছি।’
পুলিশের সার্বিক অগ্রগতির বিষয়ে সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ পুলিশ অনেক দূর এগিয়েছে। আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট বেড়েছে, জনবল বেড়েছে, ক্যাপাসিটি বেড়েছে, মানে সক্ষমতা বেড়েছে। এছাড়া পুলিশ জনবান্ধব হয়েছে, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জনগণের পৌঁছেছে পুলিশ৷ ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশের সম্প্রসারণ হয়েছে, পেশাদারত্বও বেড়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ যেহেতু আন্তর্জাতিক অঙ্গন যেমন- ইউএন মিশনে কাজ করে, ফলে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়েছে আমাদের পুলিশ। বাংলাদেশে যে আন্তর্জাতিক ইভেন্ট হয়েছে, সেখানেও পুলিশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, দিচ্ছে। দেশে আইপিইউ-র সম্মেলনে ১৩৬টি দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরা অংশ নেন। শান্তিপূর্ণভাবে শুধু এ সম্মেলন নয়, সিপিএ সম্মেলন অথবা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। এগুলোতে আমরা ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী নিরাপত্তা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত এখানে যারা এসেছেন, তারা সবাই সন্তুষ্ট।’