
প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ২২:১৯

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভৈরব বাজার এখনও জীবন্ত সাক্ষী হয়ে আছে এক শতবর্ষ পুরনো গ্রামীণ ঐতিহ্যের। এই প্রাচীন হাটটি শুধুমাত্র পণ্য কেনাবেচার স্থান নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে সিলেট অঞ্চলের মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র। প্রতি শুক্রবার এখানে প্রাণীর হাট বসে, যেখানে ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মোরগ, কবুতর থেকে শুরু করে নানা প্রজাতির পোষা পাখি কেনাবেচা হয়।
গত শুক্রবার হাটে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই ভিড় জমতে শুরু করেছে। কেউ নিয়ে এসেছেন দেশি হাঁস, কেউ রঙিন কবুতর, আবার কেউ শৌখিনভাবে পোষা তিতির বা খরগোশ বিক্রির জন্য এনেছেন। বিক্রেতা ও ক্রেতাদের দরদাম আর হাস্যরসের শব্দে মুখর পুরো বাজার এলাকা। পশ্চিম পাশে সারি সারি মোরগ ও পাখির খাঁচা সাজানো, আর পূর্ব পাশে রয়েছে ছাগল ও ভেড়ার পসরা।
রাজনগর, হবিগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিক্রেতারা তাদের পোষা প্রাণী নিয়ে আসেন এই হাটে। কেউ নিজেদের পোষা প্রাণী বিক্রি করেন, কেউ আবার নতুন পোষ্য কিনতে আসেন। অনেক ক্রেতাই এখানে এসে পছন্দের প্রাণী নিয়ে খুশি মনে ফিরে যান। দুপুর থেকে শুরু হওয়া এই হাট সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে, আর অন্ধকার নামতেই মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে যায় পুরো এলাকা।
স্থানীয়ভাবে ভৈরব বাজার নামে পরিচিত এই হাটটি আগে সড়কের পাশে বসত, তবে এখন ব্যক্তিগত জমি ইজারা নিয়ে উত্তর দিকে সম্প্রসারিত হয়েছে। ইজারাদার লিটন আহমেদ জানান, হাটটির বয়স ১০০ বছরেরও বেশি এবং গত ২০ বছর ধরে এটি পোষা প্রাণীর হাট হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তিনি বলেন, প্রতি শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে হাট শুরু হয় এবং সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত চলে।
শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান ও হাইল হাওর এলাকার সঙ্গে এই হাটের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। এখানকার সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ঐতিহ্যবাহী পরিবেশ ক্রেতা-বিক্রেতাদের আকর্ষণ করে। প্রতিদিন এখানে মাছ, সবজি, ফসল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যেরও বেচাকেনা হয়, তবে শুক্রবারের হাটটি বিশেষভাবে প্রাণী বিক্রির জন্য পরিচিত।

রাজনগর থেকে আসা এক বিক্রেতা জানান, তিনি দুটি মেষ নিয়ে এসেছিলেন এবং দাম উঠেছিল ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত, তবে প্রত্যাশিত মূল্য না পাওয়ায় ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। এইভাবেই দরদাম আর আলাপচারিতায় জমে ওঠে ভৈরব বাজারের শুক্রবারের হাট।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এদিন বাজারের আশপাশের দোকান, হোটেল ও পরিবহন ব্যবস্থাও জমে ওঠে। শুধু একটি হাট নয়, এটি এখন এ অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্য, অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি এবং গ্রামীণ সংস্কৃতির ধারক হিসেবে টিকে আছে।
স্থানীয়দের মতে, ভৈরব বাজার এখন কেবল কেনাবেচার স্থান নয়, এটি একটি প্রাণবন্ত ঐতিহ্য—যেখানে গ্রামের জীবন, সংস্কৃতি ও বন্ধনের প্রতিফলন ঘটে প্রতি শুক্রবারের প্রাণীর মেলায়।