টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার বামুনহাটা হাটের এক কোণে ছোট্ট একটি সেলুন, যেখানে আধুনিক চেয়ার বা সাজসজ্জা নেই, তবে রয়েছে একজোড়া দক্ষ হাত ও কেঁচির শব্দ। এখানেই ৫০ বছর ধরে চুল কাটছেন ঠান্ডু চন্দ্র শীল। পেশার প্রতি ভালোবাসা ও নিষ্ঠা দিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজের পরিচয়। মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবার হাত ধরে শুরু করা এই কাজের মূল্য তখন ছিল ৫০ পয়সা, যা সময়ের সঙ্গে এখন ৫০ টাকায় পৌঁছেছে।
দিন বদলালেও বদলায়নি তার কাজের প্রতি ভালোবাসা। তার আয় দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হলেও, এই আয়েই তিনি গড়ে তুলেছেন পরিবার। দুই ছেলে-মেয়েকে উচ্চশিক্ষা দিয়েছেন, চালিয়েছেন সংসার। সাধারণ চুল কাটার দোকান হলেও, তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দূরদূরান্তে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আধুনিক সেলুনে গেলে হয়তো সাজসজ্জা বেশি পাব, কিন্তু ঠান্ডুর দোকানে গেলে আরাম ও তৃপ্তি মেলে। গাবসারা গ্রামের রহিম মিয়া বলেন, তার কাজে যে দক্ষতা ও আন্তরিকতা আছে, তা অন্য কোথাও পাওয়া কঠিন। রশিদ শেখ ও মাহাতাব মিয়া বলেন, তিনি শুধু একজন নরসুন্দর নন, বরং এলাকার গর্ব।
সাধারণ একটি কাজকে দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ভালোবেসে টিকিয়ে রাখা চাট্টিখানি কথা নয়। তার ধৈর্য, নিষ্ঠা ও পরিশ্রম তাকে এলাকায় বিশেষ পরিচিতি এনে দিয়েছে। প্রতিদিন অনেক মানুষ তার কাছে চুল কাটাতে আসেন শুধু তার হাতের নিখুঁত স্পর্শ পেতে।
ঠান্ডু চন্দ্র শীল বলেন, চুল কাটা শুধু পেশা নয়, এটি আমার ভালোবাসার জায়গা। আমার কাজের প্রতি এই ভালোবাসাই আমাকে এতদিন ধরে টিকিয়ে রেখেছে। প্রযুক্তি যতই এগোক, মানুষের হাতে তৈরি শিল্পের কদর কখনো কমবে না।
তার মতো শ্রমজীবী মানুষদের নিষ্ঠা ও পরিশ্রমই প্রমাণ করে যে, মানুষ যদি নিজের কাজকে ভালোবাসে, তবে সময়ের পরিবর্তন তাকে ছিটকে ফেলতে পারে না। ঠান্ডু চন্দ্র শীলের জীবন তাই অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।