বোয়ালখালী বাজারে পাহাড়ি নারীদের শাক-সবজি বিক্রির বিশেষতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আরিফুল ইসলাম মহিন -খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: শনিবার ৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৩:৩২ অপরাহ্ন
বোয়ালখালী বাজারে পাহাড়ি নারীদের শাক-সবজি বিক্রির বিশেষতা

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বোয়ালখালী বাজারের হাটে শাক-সবজি ও অন্যান্য পাহাড়ি পণ্য বিক্রি করতে আসে নারী বিক্রেতারা। এই বাজারে মহিলাদের অংশগ্রহণ এক বিশেষ দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে পাহাড়ি অঞ্চল ও সমতলের লোকেরা একত্রিত হয়ে তাদের দৈনন্দিন জীবনধারা নিয়ে চলে আসে। হাটের দিন শনিবারে বাজারে লোকসমাগম দ্বিগুণ হয়ে উঠে, বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলের নানা ধরনের শাক-সবজি এখানে বিক্রির জন্য পৌঁছায়। 


শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হয় পাহাড়ি নারীদের প্রস্তুতি। তারা অটোরিকশা, পিকআপ, চাঁদের গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল নিয়ে তাদের উৎপাদিত শাক-সবজি বাজারে নিয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে চলে আসে পাহাড়ি খাবারেরও বিশাল সমাহার। এসব শাক-সবজির মধ্যে ঠান্ডা আলু, পাহাড়ি কচু, ক্ষিরা, জংলি আলু, তিত বেগুন, শামুক, পাহাড়ি হলুদ, আদা, বরই, কাঁচা তেতুল, আমলকি, কলা, উলুফুল ইত্যাদি স্থানীয় বাজারে একেবারে বিশেষ। 


পাহাড়ে উৎপাদিত শাক-সবজির মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় হলো ঠান্ডা আলু, যা পাহাড়ি জাতের আলু হিসেবে পরিচিত। এটি কাঁচা খাওয়া যায় এবং পাহাড়িরা শুটকি দিয়ে রান্নাও করেন। এই আলুর চাষ ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে হয়। এছাড়া পাহাড়ে উৎপাদিত মরিচও বেশ ঝাল এবং স্থানীয় খাবারে এর ব্যবহার ব্যাপক। 


পাহাড়ি সবজির মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি নাম হলো পাহাড়ি আলু, যেটি পাহাড়ি এলাকায় শিমুল আলু হিসেবে পরিচিত। এটি দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ের মানুষের খাদ্য তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এ আলু গাছটি দেখতে অনেকটা শিমুল গাছের মতো হওয়ায় এ নামটি ধারণ করেছে। 


বাজারে অন্যান্য পণ্যগুলোর মধ্যে কলাও একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। পাহাড়ে কলা চাষ বেশ প্রচলিত এবং এই অঞ্চলের কলা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়। এছাড়া পাহাড়ের ফুল ঝাড়ু বা উলুফুলও একটি স্থানীয় প্রাকৃতিক পণ্য, যা বাড়ি পরিষ্কার রাখতে ব্যবহৃত হয়। 


পাহাড়ি নারীদের এই বাজারে অংশগ্রহণ শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি তাদের সামাজিক অবস্থা এবং পারিবারিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারীরা শাক-সবজি উৎপাদন থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত সব দিকেই অংশগ্রহণ করেন, যা পাহাড়ি সমাজে নারীর অবস্থানকে শক্তিশালী করে। 


এখানে নারীদের ভূমিকা শুধুমাত্র শাক-সবজি বেচাকেনা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়, তারা পরিবারে কৃষি উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এই বাজারে এসে তারা শুধু তাদের পণ্য বিক্রি করেন না, বরং তাদের কাজের মাধ্যমে সবার মধ্যে নারীর অবদানের গুরুত্ব তুলে ধরেন। 


খাগড়াছড়ির এ ধরনের বাজার সারা দেশে একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে, যেখানে পাহাড়ি ও সমতল অঞ্চলের লোকজন একে অপরের সাথে মেলামেশা করেন এবং পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক লাভের সুযোগ সৃষ্টি করেন।