জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিএনপির প্রভাব খাটিয়ে কৃষি জমি থেকে টপ সয়েল (জমির উপরিভাগের মাটি) জোরপূর্বক উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, এই কাজে ব্যবহৃত স্কেভেটর (ভেকু) জমির উর্বরতা কমাচ্ছে এবং ফসল উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। একাধিক অভিযোগ সত্ত্বেও স্থানীয় প্রশাসন থেকে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এলাকার কৃষকদের অভিযোগ, মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের সুখনগরী এলাকায় একাধিক ব্যক্তি এই কাজে লিপ্ত। গত ২৮ জানুয়ারি, মঙ্গলবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দু’তিনটি ফসলি জমি থেকে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এই জমিতে তারা দীর্ঘ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করে আসছেন।
মোঃ রাশেদুল ইসলাম নামে এক কৃষক জানান, তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সুখনগরী মৌজার ৪ একর ২২ শতাংশ জমি ভোগদখল করে আসছেন। এই জমি দিয়ে তার পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে, কিন্তু সম্প্রতি কিছু ব্যক্তি বিএনপির প্রভাব খাটিয়ে এই জমির উপর থেকে মাটি কাটছে। রাশেদুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, এ বিষয়ে তিনি জামালপুর জেলা প্রশাসক, মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এসিস্ট্যান্টের কাছে বহুবার অভিযোগ দিয়েছেন, কিন্তু তার অভিযোগে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন, সাবল মিয়া (২৫), মোঃ মারুফ মিয়া (৩০), চাঁন মিয়া (৬০), খাজা মিয়া (৫০), আলামিন (৩০), বাবু, জাহিদুল ইসলাম এবং আরও কয়েকজন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে জমির মাটি উত্তোলন করে চলেছেন, তবে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
রাশেদুল ইসলাম আরও জানান, তিনি বহুবার বালিজুড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে অভিযুক্তরা তাকে জমি নিয়ে নানা সমস্যা তৈরি করার জন্য প্রতিনিয়ত হয়রানি করছে। তিনি জানান, এসব ঘটনা থানা, আর্মি অফিস এবং ডিবি অফিসেও গিয়েছেন, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি। তিনি আরও বলেন, "আমরা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার প্রত্যাশা করছি।"
বালিজুড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মঞ্জরুল ইসলাম মুছা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, "আমি এসব বিষয়ে কিছু জানি না। আমি তো ওই জমিতে ছিলাম না। আমি কীভাবে এসব জানব?" তার দাবি, জমি নিয়ে কিছু সালিশি বৈঠক হয়েছে, তবে সেখানে তার কোনো ভূমিকা ছিল না।
অভিযুক্ত সাবল মিয়া জানান, "আমরা জমি কিনে নিয়েছি। তাদের জমি নিয়ে কোনো কাগজপত্র নেই, তাই আমরা জমিতে কাজ করতে গেলে তারা আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হয়রানি করে।" তার মতে, এই জমি তাদের নিজস্ব সম্পত্তি, এবং তারা আইনসিদ্ধভাবে মাটি উত্তোলন করছেন।
মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন বলেন, "এটা তাদের দীর্ঘদিনের সমস্যা। মামলাও চলমান রয়েছে, এবং কোর্ট থেকে কোনো নির্দেশনা আসলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।" তিনি আরও জানান, পুলিশ চেষ্টা করছে যাতে আইন অনুযায়ী সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাদির শাহ বলেন, "এই বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। আমি এসিস্ট্যান্ট কে বলেছি, আগামীকালই আমরা ব্যবস্থা নেবো।" তার মতে, দ্রুত একটি সমাধান খুঁজে বের করা হবে এবং কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত না হতে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
এদিকে, এলাকার কৃষকরা তাদের জমির উর্বরতা রক্ষার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, কারণ দীর্ঘদিন ধরে ফসলি জমি থেকে মাটি উত্তোলন করা হলে আগামী দিনে ফসল উৎপাদন কমে যেতে পারে এবং স্থানীয় অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মাটি কাটার এই প্রক্রিয়া ফসলি জমির উর্বরতা কমিয়ে দেয় এবং স্থানীয় কৃষকদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এক্ষেত্রে, স্থানীয় প্রশাসন যদি কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তবে কৃষির উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
কৃষকরা বলছেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ড যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে তাদের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন যদি দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তবে তাদের ফসলি জমি আর আগের মতো উর্বর থাকবে না।
তবে মাদারগঞ্জ উপজেলার প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে যে, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে এবং কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করবে। কৃষকদের প্রত্যাশা, শীঘ্রই প্রশাসন এই সমস্যার সমাধান করবে এবং তাদের জমি থেকে মাটি উত্তোলন বন্ধ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।