নওগাঁতে জাতীয় পরিচয়পত্রের ক্ষেত্রে চেহারার পরিবর্তে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে পরিচয় যাচাইয়ের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুরে শহরের মুক্তির মোড়ে শহীদ মিনারের সামনে নওগাঁ জেলা পর্দানশীল নারী সমাজ নামে একটি সংগঠন এ কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নারীরা অভিযোগ করেন, গত ১৬ বছর ধরে অসংখ্য পর্দাশীল নারীর জাতীয় পরিচয়পত্র আটকে রাখা হয়েছে, যা তাদের শিক্ষা এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
তারা আরও বলেন, পরিচয় যাচাইয়ের নামে পর্দাশীল নারীদের চেহারা খুলতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন। তারা দাবি করেন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। মানববন্ধনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উপস্থাপন করা হয়। প্রথমত, যেসব নির্বাচন কর্মকর্তা বিগত ১৬ বছরে পর্দাশীল নারীদের জাতীয় পরিচয়পত্র আটকে রেখেছেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ধর্মীয় এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করে জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার সময় নারী সহকারী উপস্থিত রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের ক্ষেত্রে এমন সমস্যার কারণে পর্দাশীল নারীরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে সামাজিক নানা সেবার সুযোগ থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা দাবি করেন, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার, যা ধর্মীয় বিশ্বাস বা গোপনীয়তার কারণে ব্যাহত হতে পারে না।
মানববন্ধন শেষে সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলা নির্বাচন অফিসার ও জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। স্মারকলিপিতে উত্থাপিত দাবিগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এদিকে এ কর্মসূচি স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অনেকেই মনে করেন, ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে পরিচয় যাচাই ব্যবস্থা চালু করলে এ ধরনের সমস্যার সমাধান হবে এবং এটি পর্দাশীল নারীদের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে নির্বাচন অফিস থেকে এ বিষয়ে কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানে দীর্ঘসূত্রিতা ও বৈষম্যমূলক আচরণ শুধু পর্দাশীল নারীদেরই নয়, পুরো সমাজের জন্য ক্ষতিকর। ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তার অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে তারা আরও বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।
এ ধরনের সমস্যার সমাধানে নীতিমালা প্রণয়ন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা মানববন্ধনে বিশেষভাবে উঠে আসে। অংশগ্রহণকারীরা এ বিষয়টিকে মৌলিক অধিকার এবং মানবাধিকার রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।