হযরত তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রাঃ) ছিলেন এক অতি পরিশ্রমী ও নিষ্ঠাবান সাহাবি। তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর অন্যতম স্নেহধন্য সাহাবি, যার জীবন ছিল অত্যন্ত ত্যাগী ও উদাহরণস্বরূপ। একটি ঘটনা থেকে আমরা তার আত্মত্যাগ ও নবীজীর (সাঃ) প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং বিশ্বাসের এক বিশেষ চিত্র দেখতে পাই।
হযরত তালহা (রাঃ) প্রতিদিন ফজরের নামাজ শেষে দ্রুত মসজিদ ত্যাগ করে বাড়ি চলে যেতেন। এটি দেখে অন্যান্য সাহাবিরা সন্দেহ করতে শুরু করেন এবং তারা বিষয়টি আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর কাছে তুলে ধরেন। তারা জানান যে, নবীজী (সাঃ) তো ফজরের নামাজের পর মসজিদে বসে বয়ান করেন, কিন্তু তালহা কেন সেখান থেকে দ্রুত চলে যান।
একদিন নবীজী (সাঃ) তালহাকে ডেকে পাঠালেন এবং তার কণ্ঠে কোমলতা ছিল, যেন তিনি তার অন্তরের গভীরে থাকা ব্যথা মুছতে চান। নবীজী (সাঃ) বললেন, “তালহা! আমি কি তোমাকে কোন কষ্ট দিয়েছি? আমি কি তোমার কোন হক নষ্ট করেছি?”
এই প্রশ্ন শুনে তালহা (রাঃ) কেঁদে ফেললেন। তিনি বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ), আপনি আমার প্রতি কোনো অবিচার করেননি। কিন্তু আপনার কাছে একটা বিষয় বলা খুবই কঠিন।” এরপর তিনি বললেন, “আমার একমাত্র জামাটি আমার স্ত্রী ও আমার সতর ঢাকা রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। নামাজের সময় আমার স্ত্রী যখন জামা পরেন, আমি উলংগ থাকি এবং যখন আমি জামা পরি, তখন আমার স্ত্রী উলংগ থাকেন। এ অবস্থায় আমার স্ত্রীকে রেখে মসজিদে আসা এবং নামাজ শেষে ফিরে যাওয়ার মধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। আমি যদি এখানে বসে থাকি, আমার স্ত্রীর নামাজ কাজে যাবে।”
এই কথা শুনে নবীজী (সাঃ) অসীম দয়া ও দরদে কেঁদে ফেলেন। তাঁর চোখের পানি তাঁর দাঁড়ির উপর দিয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে। তিনি সাথে সাথে বললেন, “তালহা! তোমার এই ত্যাগের জন্য আমি জানাচ্ছি, তুমি জান্নাতে যাবে।”
এ ঘটনাটি মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে এবং এটি আমাদের জন্য এক মহান শিক্ষা। হযরত তালহা (রাঃ)-এর মতো সাহাবিরা সত্যিই এক অসীম ত্যাগী, যারা নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের চিন্তা না করে একমাত্র আল্লাহর رضا এবং নবীজীর (সাঃ) নির্দেশ পালনে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
আমরা যখন তার এই ত্যাগ ও আত্মত্যাগের কথা ভাবি, তখন আমাদের হৃদয়টিও আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি অগাধ ভালোবাসায় পূর্ণ হয়ে ওঠে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।