শিক্ষার মানোন্নয়ন জরুরি? সরাইলে শিক্ষাঙ্গন গুলো নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত !

নিজস্ব প্রতিবেদক
মো: তাসলিম উদ্দিন, উপজেলা প্রতিনিধি সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১৬ই জুলাই ২০২৪ ০৩:১০ অপরাহ্ন
শিক্ষার মানোন্নয়ন জরুরি? সরাইলে শিক্ষাঙ্গন গুলো নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত !

শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা অসামান্য। বছরের প্রথম দিনে বই বিতরণ সরকারের একটা বড় সাফল্য। এখানে সকল ধর্ম বর্ণের জাতি উপজাতি, ধনী-গরীব এবং নানান পেশার মানুষের সন্তান গুলোকে প্রকৃত মানুষ হওয়ার দীক্ষা দেওয়া হয়।কিন্তু আমাদের এই পবিত্র শিক্ষাঙ্গন গুলো নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। যেখানে আগামীর সমৃদ্ধ জাতি গঠনের চাষাবাদ করা হয় সেখানেই যদি সমস্যা থাকে তা হলে আমরা সমৃদ্ধ জাতি গঠনে পিছিয়ে পড়বো।


তাই প্রথমে শিক্ষাঙ্গনের সৌন্দর্য ও পবিত্রতা রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। তা শুধু শিক্ষকদের মাধ্যমে সম্ভব নয়,কেবল শিক্ষার্থীরাই এর সমাধান করবে তাও নয়, অভিভাবকদের একার প্রচেষ্টায় সম্পন্ন হবে এমনও বলা যাবে না। তা হলে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে সম্মিলিত ভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অভিভাবক এবং সমাজের সচেতন নাগরিক সবাইকে। একটি শিক্ষাঙ্গনকে শ্রেষ্ঠ ,সুন্দর প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার জন্য যোগ্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান, দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ,প্রশিক্ষিত শিক্ষক, আগ্রহী ও মনোযোগী শিক্ষার্থী এবং সচেতন অভিভাবক থাকা একান্ত আবশ্যক। শিক্ষা ও শিক্ষার মান কথা দুটির ভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে। 


শিক্ষা বলতে শুধু শিক্ষিত জাতি গঠন কিন্তু দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হলে শিক্ষার মান নিশ্চিত প্রয়োজন। বর্তমানে বহুল উচ্চারিত শব্দ হলো ‘মানসম্মত ও গুণগত শিক্ষা’। শিক্ষা দেওয়া ও গ্রহণ করার সাধারণ রীতি যেটা শিক্ষিত খেতাবের জন্য, কিন্তু একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে গেলে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষা। তাই শিক্ষার মান উন্নয়ন প্রয়োজন। যদি শিক্ষার মান উন্নয়ন করা যায়, তাহলে দেশের উন্নয়নও দ্রুত গতিতে হবে।


এ কথা সত্য শিক্ষার সাথে যত গুলো পক্ষ জড়িত তাদের মধ্যে শিক্ষক হচ্ছেন সর্বোত্তম। বর্তমান সরাইলের শিক্ষার ব্যবস্থার মান নিয়ে  কথা তুলেছেন অভিভাবকরা। এদিকে সরাইলে প্রাথমিকের বিভিন্ন অভিভাব কদের সাথে কথা বলে জানাযায়, শিক্ষক দের ক্লাস গ্রহণে উদাসীনতা, পাশাপাশি তাদের উপযুক্ত তদারকির অভাবে দিনদিন কমে যাচ্ছে প্রতিবছর ‘ কোটি কোটি টাকা’ ব্যয়ে পরিচালিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা। ইতোমধ্যে অনেকটা কমেও গেছে।এর ব্যতিক্রম নয় দেশের  ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলও। 


তবে এখানে শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার পেছনে গ্রামে-গঞ্জে অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন তথা কেজি স্কুল প্রতিষ্ঠাও দায়ী।দেশে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে বই বিতরণ করে উৎসব পালন করছে।সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের উপকরণ কেনা বাবদ দেওয়া হচ্ছে উপবৃত্তি। একইসঙ্গে  চালু হচ্ছে নতুন বইয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নতুন পোশাক কেনার অর্থ দেওয়ার ব্যবস্থাও।এছাড়াও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেওয়া হয়েছে সুসজ্জিত একাডেমিক ভবন। বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা, ক্ষুদ্র মেরামত ও প্লে শ্রেণির কক্ষ সজ্জিতকরণ এবং শিক্ষা উপকরণ কেনার পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রয়েছে একেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।



পাশাপাশি পাঠদানের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষকও নিয়োগ রয়েছেন। এরপরও শিক্ষার্থী কমছে প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।জানা গেছে, মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নের অভাবের কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সন্তানদের পাঠাচ্ছেন না অভিভাবকরা। বেশি টাকা খরচ হলেও তারা সন্তানকে দিচ্ছেন কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষা। যদিও ‘অভিভাবকদের কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার’ উদ্দেশ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে সরকার।



অভিভাবকরা জানিয়েছেন, সঠিক জবাবদিহিতা নেই সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এ কারণে পাঠদানে আগ্রহী নন শিক্ষকরা। একইসঙ্গে সরকারি চাকরি স্থায়ী মনোভাবের কারণে ক্লাসে অনিয়মিত উপস্থিতি থাকে তাদের। তারা বলছেন, শিক্ষকদের পাঠদান নিয়মিত মনিটরিং না করায় তারা এ ব্যাপারে আন্তরিক না। চাকুরি বাঁচানোর একটা উপায় হিসেবে তারা পাঠদান করছেন। তাই বাধ্য হয়ে অর্থ ব্যয় করে হলেও সন্তানদের কেজি স্কুলে পাঠাচ্ছি।


এছাড়া শুধু আমরাই নয়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ খোদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও নিজেদের সন্তানকে কেজি স্কুলে পাঠাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকরা তারা প্রাইভেটে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন এমন অভিযোগ রয়েছে। সরাইল উপজেলায় ১২৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই ব্যাপারে মহন, মাহির, বরকত নামের অভিভাবক বলেন, প্রাথমিকের সরকারি শিক্ষকরা ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেতন নিয়েও ঠিকমতো ক্লাস নিচ্ছেন না। অথচ যারা সরকারি চাকুরি না পেয়ে কেজি স্কুলে মাত্র তিন থেকে চার হাজার টাকা মাসিক বেতনে কাজ করছেন, তাদের পাঠদানে সবাই ঝুঁকে পড়েছেন। 


এর কারণ সরকারি বিদ্যালয়ে নিয়মিত মনিটরিং করা হয় না। সম্প্রতি সরকারি হওয়া বিদ্যালয়ে এমন কিছু শিক্ষক রয়েছেন, যারা নিজেই ইংরেজি পড়তে বা লিখতে পারেন না। এমন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে কী পড়াবেন?নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার  বলেন, মনিটরিং করে একজন শিক্ষককে বদলি করার সুপারিশ করা গেলেও তাকে দক্ষ করার সুযোগ নেই। এছাড়া সরকারি চাকরি একবার হয়ে গেলে তা হারানোর কোনো ভয় তাদের মধ্যে থাকে না। কেজি স্কুলে চাকরি হারানোর ভয় থাকায় শিক্ষকরা বেশ আন্তরিক থাকেন।


প্রাথমিক শিক্ষার মান ফেরাতে শিক্ষকদের দক্ষ করতে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ ও ফাঁকিবাজদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান করা প্রয়োজন বলে করেছেন তিনি।সরাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নৌসাদ মাহমুদ এ প্রতিনিধিকে বলেন,উপজেলায় ১২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।প্রাথমিক স্তরে প্রায় ৩৪ হাজার শিক্ষার্থী  সরকারি, বেসরকারি, ইবতেদায়ি ও কেজি স্কুলে পড়ছে। তবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে নতুন করে একই


স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।তিনি বলেন, কেজি স্কুলের ভিড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কিছুটা কমে গেছে ঠিকই। সরকারি শিক্ষকরা ও অভিভাবকরা আন্তরিক না হলে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে শিক্ষকদের আন্তরিকতার সঙ্গে পাঠদানের আহ্বান জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো.মেজবা উল আলম ভূইঁয়া বলেন,অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ সহ যা-যা করা দরকার সরকার  সবই করে যাচ্ছেন। 


শিক্ষার মান উন্নয়নে  শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আরো সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসলো কিনা খোঁজ খবর রাখা। শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসার পর  শিক্ষকরা ভালো করে তাদেরকে  দেখাশোনা করা।শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায়  মনোযোগী হতে হবে। তাদের  তিনের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই  মানসম্মত  শিক্ষা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্কুলে নিয়মিত ভিজিট করা হচ্ছে।এ তিনটি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ইউএনও বলেন,বিদ্যালয়ে পাঠদানে কোন শিক্ষকের  উদাসীনতা ও ক্লাস ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।