পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। তবে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পশু নিয়ে হাটে আসতে শুরু করেছেন খামারি ও কারবারিরা। তবে এখনও বেচাকেনা তেমন জমে ওঠেনি। অনেকে হাটে গিয়ে ঘুরে পশু দেখছেন ও দরদাম করছেন।জানা গেছে, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় অস্থায়ী পশুর হাট বসছে ২০টি। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ১১টি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) বসছে ৯টি পশুর হাট।
এ ছাড়া উত্তর সিটির অন্তর্গত গাবতলী ও দক্ষিণ সিটির অন্তর্গত শারুলিয়ার স্থায়ী হাটও যুক্ত হবে। অর্থাৎ এ বছর মোট পশুর হাট থাকবে ২২টি।এরই মধ্যে রাজধানীর বৃহত্তম পশুর হাট উত্তরার দিয়াবাড়ী ও পোস্তগোলাসহ বেশ কয়েকটি হাটে নির্ধারিত সময়ের আগেই ব্যবসায়ীরা গরু, মহিষ তোলা শুরু করেছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, ক্রেতারা হাটে ভিড় করছেন, তারা কেবল পশু দেখছেন এবং দাম যাচাই করছেন। সার্বিকভাবে এখনও জমে ওঠেনি কুরবানির পশুর হাট।তারা আরও বলছেন, হাটে ক্রেতার সমাগম এখন কম। কেবল জমতে শুরু করেছে। হাট আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলে বেচা-বিক্রি বাড়বে। গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় পশুর দাম এবার বেশি।হাট ঘুরে ক্রেতারা বলছেন, গতবারের চেয়ে এবার পশুর দাম একটু বেশি চাচ্ছেন বেপারিরা।
শনিবার (৯ জুন) দিয়াবাড়ীর হাটে কথা হয় গরু ব্যবসায়ী আকমল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর গরুর খরচ বেশি পড়েছে। গোখাদ্যের দামসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। তবে এবার মোটামুটি কম লাভেই গরু বিক্রি করে দিবেন বলে জানান তিনি।
মিরপুরের বাসিন্দা সুমন ইসলাম বলেন, হাট ঘুরে দেখছি। দামের আইডিয়া নিচ্ছি। কয়েকদিন পরেই কিনব।সরেজমিনে দেখা গেছে, কুরবানির ঈদ উপলক্ষে দিয়াবাড়ীসহ রাজধানীর পশুর হাটগুলোর প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে। এসব হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনা হচ্ছে পশু। হাটগুলোর ইজারাদাররা তাদের লোক নিয়োগ করে হাটে তদারকি শুরু করেছেন। পুলিশ প্রশাসন এবং সিটি করপোরেশনও নিরাপত্তাসহ অন্যান্য আয়োজন সম্পন্ন করেছে।
আগামী ১৩ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কুরবানির পশুর বেচা-বিক্রি শুরু করার নির্দেশনা দেওয়া হলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই বেশ কয়েকটি হাটে হাজার হাজার পশু তোলা হয়েছে।শনিবার গাবতলী, দিয়াবাড়ী, বনশ্রী, খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া, বসিলা ও পোস্তগোলা পশুর হাটে সরেজমিনে দেখা গেছে, ইজারা হওয়া হাটের জায়গাগুলোতে কমবেশি গরু থাকলেও এখনও ইজারাদাররা শ্রমিকদের নিয়ে কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে ক্রেতাদের ভিড় নেই।
অন্যদিকে চাহিদার তুলনায় দেশে কুরবানি পশুর সংকট নেই বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আবদুর রহমান। তিনি বলেছেন, সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত এবার কুরবানির পশু আমদানি করা হবে না।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানায়, এ বছর কুরবানির জন্য এক কোটি ৩০ লাখেরও বেশি পশু রয়েছে। আর দেশে চাহিদা রয়েছে এক কোটি ১০ লাখের মতো। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় ২০ লাখ পশু বেশি আছে। গত বছর সারা দেশে কুরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল এক কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি। এর মধ্যে এক কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি পশু কুরবানি করা হয়। কুরবানি হওয়া গবাদি পশুর মধ্যে ৪৫ লাখ ৮১ হাজার ৬০টি গরু, এক লাখ ৭ হাজার ৮৭৫টি মহিষ, ৪৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৮টি ছাগল, ৫ লাখ ২ হাজার ৩০৭টি ভেড়া এবং ১ হাজার ২৪২টি অন্যান্য পশু ছিল।
যেসব স্থানে বসছে অস্থায়ী পশুরহাট : ডিএসসিসি আওতাভুক্ত উত্তর শাহজানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার মৈত্রী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা। পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা। ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা। মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা। দনিয়া কলেজ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা। ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আফতাবনগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক ই, এফ, জি, এইচ, সেকশন ১ ও ২ এর খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গাসহ কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা। আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ও শ্যামপুর কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন খালি জায়গা।
উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৯টি হলো, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরা দিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টর, বউ বাজার এলাকার খালি জায়গা, ভাটারা সুতিভোলা খাল-সংলগ্ন খালি জায়গা (ভাটারা সুতিভোলা), বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং আফতাবনগর ব্লক ই, এফ, জি, এইচ, এল, এম, এন এবং আশপাশের জায়গা (পুনরায় টেন্ডার), মোহাম্মদপুর বছিলার ৪০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউউট সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁচকুড়া বেপারীপাড়া রাহমান নগর আবাসিক প্রকল্পের জায়গা ও খিলক্ষেত থানার ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মস্তুল চেকপোস্ট সংলগ্ন পাড়ার খালি জায়গা। মিরপুর সেকশন ওয়ার্ড নম্বর ৬ (ইস্টার্ন হাউজিং) খালি জায়গা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।