ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলের গণরুমে বিবস্ত্র করে র্যাগিংয়ের ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে শেখ রাসেল হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, আইন প্রশাসক আনিচুর রহমানকে সদস্য এবং সহকারী প্রক্টর জনাব মিঠুন বৈরাগীকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বিষয়টা নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে চার সদস্য বিশিষ্ট ভিন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে লালন শাহ হল প্রশাসন। কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।কমিটিতে হলটির আবাসিক শিক্ষক ড. আলতাফ হোসেনকে আহ্বায়ক ও হলের সহকারী রেজিস্ট্রার জিল্লুর রহমানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্যরা হলেন, আবাসিক শিক্ষক আব্দুল হালিম ও ড. হেলাল উদ্দিন।
এছাড়াও সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ৭ টার দিকে ঘটনার তদন্তে লালন শাহ হলে এসেছিলেন কুষ্টিয়া থানার এসআই মো: খায়রুজ্জামান। তদন্ত শেষে তিনি বলেন, তদন্ত হচ্ছে, রিপোর্ট জমা দিব। বাকিটা পরে জানা যাবে। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিষয়টা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে চাচ্ছে না। যেহেতু পত্র পত্রিকায় প্রচার হয়ে গেছে এরই ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্যই তদন্ত করবে। আমরা সরকারি পক্ষ থেকে কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে নিয়মকানুনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিবে।
প্রসঙ্গত, ইবিতে এক শিক্ষার্থীকে রাতভর র্যাগিং, নগ্ন করে রড দিয়ে মারধর, অশ্লীল ছবি দেখানো সহ মা-বাবার নাম ধরে অশ্লীল গালাগালি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাতে লালন শাহ হলের গণরুমে (১৩৬ নং কক্ষ) দু'দফায় রাত ১০ টা থেকে ১ টা এবং ঘুম থেকে তোলে ১ টা থেকে ভোর পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। পরে হল পরিচালক নেতাকর্মীরা বিষয়টি ঘরোয়াভাবে সমাধান করলে বিশেষ চাপে লিখিত অভিযোগ দেয়নি ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্তরা হলেন- শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুদাচ্ছির খান কাফি এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাগরসহ অন্তত ৪ জন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ১৩৬ নং কক্ষে কিছু সিনিয়র পরিচয়পর্বের নামে ভূক্তভোগীকে ডাকেন। পরিচয়ের এক পর্যায়ে শুরু হয় র্যাগিং। এসময় ভুক্তভোগীর বাবা-মা তুলে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে সিনিয়ররা। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীকে অশ্লীল অঙ্গিভঙ্গি করতে বাধ্য করা হয়। পরে ওই শিক্ষার্থী এসব করতে অস্বীকৃতি জানালে লোহার রড দিয়ে পেটাতে থাকেন অভিযুক্তরা। এছাড়াও উলঙ্গ অবস্থায় সিনিয়ররা তাকে অশ্লীল ভিডিও (পর্নগ্রাফি) দেখতে বাধ্য করেন।
হল পরিচালক নেতাকর্মীদের মাধ্যমে মীমাংসা করতে গেলে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তরা প্রাথমিক স্বীকারোক্তি দিলেও এখন বিষয়টা অস্বীকৃতি জানায়। মীমাংসার সময় নেতার জিজ্ঞেসাবাদে ভুক্তভোগী স্বীকার করলে বলেন, “আমি হল দেখাশোনা করি, পাঁচ মাস অত্যাচার সহ্য করে আসছিলি, আমারে একবার বলা উচিত ছিল না ?”
তবে মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টা মিটমাট করা হয়েছে বলে সন্তোষজনক জ্ঞাতার্তে প্রক্টর বরাবর লিখিত পত্র দেয় ভুক্তভোগী।
এদিকে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, এরা ছাত্রলীগের কর্মী না। সত্যতা যাচাই করা হোক। এর দায়ভার ছাত্রলীগ নিবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, লিখিত অভিযোগ না পেলেও প্রত্রিকায় প্রকাশিত নিউজের ভিত্তিতে তদন্ত করা হবে। এরকম ঘটনার সাথে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা আছে হাইকোর্টের।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।