টাকা ছাড়া মেলে না ইপিআই টিকাকার্ড!

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার ২৬শে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১০:০৫ অপরাহ্ন
টাকা ছাড়া মেলে না ইপিআই টিকাকার্ড!

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় গত ছয় থেকে আট মাসে জন্ম নেয়া অধিকাংশ শিশুর টিকাদানের পর মিলছে না টিকাকার্ড। ফলে জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন অভিভাবকরা। অপরদিকে স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুল মবিনের বিরুদ্ধে নবজাতকের অভিভাবকদের টাকার বিনিময়ে ইপিআই টিকাকার্ড সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে।


রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কথা হয় বেশ কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে। তারা টিকাকার্ড না পাওয়া এবং এ নিয়ে ভোগান্তির কথা জানান। 


রাজিব গ্রামের পারভিন আকতার বলেন, ‘আমার শিশুর বয়স দুই মাস। রাজিব এলাকায় ইপিআই টিকাদানের পর এখনও কার্ড পাইনি। টিকাকার্ড নাকি টাকা দিয়ে কিনতে হবে, জানিয়েছেন ইপিআই কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা।’


শহীদবাগ বল্লভবিষু গ্রামের বাসিন্দা প্রতিমা রানী বলেন, ‘আমার শিশুকে চারটি টিকা দেয়া হয়েছে, কিন্তু কার্ড পাইনি। হাতে সাদা কাগজে স্লিপ দিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু জন্মনিবন্ধনের জন্য শিশুর ইপিআই টিকাকার্ড চাওয়া হচ্ছে।’


জানা গেছে, ঠিক সময়ে শিশু ও মাকে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করাই স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের অন্যতম সাফল্য। দেশের মানুষকে টিকা দিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সুখ্যাতি কুড়িয়েছে। এই সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৯ সালে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গাভি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ হিসেবে পুরস্কৃত করে। এর আগে ২০০৯ ও ২০১২ সালে ‘গাভি বেস্ট পারফরম্যান্স’ পুরস্কার পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু কাউনিয়ায় নবজাতকদের টিকা দেয়ার পর বিড়ম্বনায় পড়ছেন অভিভাবকরা। টিকাদানের পর টাকা দিয়ে নিতে হচ্ছে টিকাকার্ড।


হারাগাছ পৌর এলাকার সারাই মধ্যপাড়ার বাসিন্দা মিমি বলেন, ‘আমার মেয়ের বয়স দুই মাস। একই এলাকার ইসলামের বাড়িতে গত বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ইপিআই কেন্দ্রে শিশুর তৃতীয় ডোজ টিকা দেয়। টিকাকার্ড চাইলে কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুল মবিন তাকে জানান, টিকা কার্ডের সরবরাহ নেই। কার্ড নিতে একশ টাকা লাগবে। পরে টাকা দিয়ে টিকাকার্ড সংগ্রহ করি।’


এ অভিযোগের বিষয়ে স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুল মবিন বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে টিকাকার্ড সরবরাহ করা হচ্ছে না। কম্পিউটারের দোকান থেকে প্রিন্ট করে টিকাকার্ড নবজাতকের অভিভাবকদের সরবরাহ করা হয়। টিকাকার্ড প্রিন্টের জন্য টাকা নেয়া হয়েছে।’


তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রশিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন কেন্দ্রে শূন্য থেকে ১৫ মাস বয়সী শিশুদের টিকা দেয়া হয়। সে জন্য মাসে ৪৬৫টি নতুন টিকাকার্ডের প্রয়োজন হয়। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কাউনিয়া উপজেলায় পর্যাপ্ত টিকাকার্ড সরবরাহ রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী প্রতিমাসে স্বাস্থ্য সহকারীদের ইপিআই টিকাকার্ড সরবরাহ করা হয়।


তিনি বলেন, ‘শিশুদের টিকাদানের পর কার্ড না পাওয়ার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। এমনকি টাকার বিনিময়ে ইপিআই টিকাকার্ড দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক স্বাস্থ্য সহকারীর বিরুদ্ধে। বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য প্রধান কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে।’

 

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘যেকোনো শিশুর পরিচয়ে জন্মনিবন্ধন সনদ না পাওয়া পর্যন্ত দালিলিক প্রমাণ হলো ইপিআই হলুদ কার্ড। প্রত্যেক শিশুর জন্য জন্মনিবন্ধনের এই কার্ড অপরিহার্য। শিশুরা টিকা পাচ্ছে কিন্তু টিকাকার্ড পাচ্ছে না।’


উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে পর্যাপ্ত টিকাকার্ড আছে এবং চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্য সহকারীদের তা সরবরাহ করা হচ্ছে। যদি কোনো নবজাতকের অভিভাবক টিকাকার্ড না পেয়ে থাকেন এবং অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে ‘


রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. শামীম আহমেদ বলেন, ‘শিশুমৃত্যুর হার কমাতে শূন্য থেকে ২৪ মাস বয়সী শিশুদের টিকাদানের পর সব শিশুর বিনা মূল্যে টিকাকার্ড পাওয়ার কথা। কাউনিয়া উপজেলায় কেন টিকা কার্ড পাচ্ছে না, বিষয়টি দেখা হচ্ছে। আর কোনো স্বাস্থ্য সহকারী টাকার বিনিময়ে টিকাকার্ড সরবরাহ করে থাকে তার ছবিসহ নিউজ করেন।’


রংপুর জেলা প্রশাসক ডা. চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, ‘শিশুদের জন্মনিবন্ধনের টিকাকার্ড অপরিহার্য। কার্ড না পেলে বিড়ম্বনায় পড়বেন অভিভাবকরা। আমি বিষয়টি দেখছি।’


স্বাস্থ্য অধিদফতর রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডা. এ.বি.এম আবু হানিফ বলেন, ‘টিকাকার্ড প্রদানের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেখভাল করে। ইপিআই কার্যক্রম সফলতায় প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার পেয়েছেন। আর সরকারের এই কার্যক্রম বিঘ্নিত করতে কোনো স্বাস্থ্য সহকারী যদি টিকাকার্ড না দেয় এবং টাকার বিনিময়ে টিকাকার্ড সরবরাহ করার যে অভিযোগ উঠেছে–খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে।’

সূত্র: সময় নিউজ