মোরেলগঞ্জে শিক্ষক-কর্মচারী সংকটে ব্যাহত পাঠদান

নিজস্ব প্রতিবেদক
জেলা প্রতিনিধি-বাগেরহাট
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২০শে জানুয়ারী ২০২২ ০৯:৩৩ অপরাহ্ন
মোরেলগঞ্জে শিক্ষক-কর্মচারী সংকটে ব্যাহত পাঠদান

শিক্ষক-কর্মচারী সংকট সহ নানা সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে মোরেলগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯ জন শিক্ষকের বিপরীতে আছে মাত্র ৬জন। অন্যদিকে ৭জন কর্মচারীর পদ দীর্ঘদিন ধরেই খালি  রয়েছে। 


শিক্ষকদের মধ্যে বাংলা বিষয়ের শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় ৬ বছর ধরে। বাংলা বিষয়ে আর একটি পদ ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে খালি  রয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝিতে এ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পিএলআর এ চলে যাবেন। দাপ্তরিক কাজ সামলে নিয়মিত ক্লাস  নেওয়া  তার পক্ষে বেশিরভাগ  সময়ই সম্ভব  হয়ে ওঠে  না। অর্ধযুগ ধরে সহকারী  প্রধানের পদটিও খালি পড়ে আছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা  গণিত বিষয়ের  পদটিই দীর্ঘদিন ধরে খালি।  ফলে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির সাধারণ গণিত এবং ৯ম-১০ম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের উচ্চতর গণিত বিষয়ের পাঠদান চলছে গোঁজামিল দিয়ে। 


জীববিজ্ঞানের একমাত্র পদটিও শূন্য। সামাজিক বিজ্ঞানের ৩টি পদের বিপরীতে নেই কোন শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে নেই ভূগোলের শিক্ষকও। গার্হস্থ্য বিষয়ের ২ টি পদের বিপরীতে নেই কোন শিক্ষক। ফলে  মহিলা শিক্ষক দিয়ে পাঠদানের এ বিষয়টি পুরুষ শিক্ষক পাঠদান করতে গিয়ে  পড়ে যান বিপাকে। কৃষিশিক্ষা বিষয়ের পদটিও শূন্য  রয়েছে। হিন্দু ধর্মের নেই কোনই শিক্ষক। উচ্চমান সহকারী ও নিম্নমান সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক ২টি পদ শুন্য পড়ে আছে ৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে। ৫ জন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে নেই কেউ-ই। মাস্টার রোলে ২ জন মহিলাকে নিয়োগ দিয়ে চলছে কাজ কোন রকমে। অর্ধযুগ ধরে চলে আসছে বিদ্যালয়ের এ নাজুক অবস্থা। ফলে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে ৮০০ থেকে এখন ৪৯১ জনে নেমে এসেছে। 


এমন পরিস্থিতিতেও শিক্ষক পুরণ না করে শিক্ষক বদলি করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এতে মুখ থুবড়ে পড়েছে মোরেলগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা।


মানসম্মত শিক্ষা  তো দূরের কথা নূন্যতম শিক্ষাও পাচ্ছে না এই বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। বিজ্ঞান পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অবস্থা আরও বেগতিক। সন্তানকে সুশিক্ষিত করতে চরম বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা। প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয়রা।


 ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৮৪ সালে জাতীয়করণ হয় মোরেলগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। সেই থেকে পরিপূর্ণ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ে সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছিল বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের সুনাম ও ঐতিহ্যে অন্য উপজেলা থেকে একসময় শিক্ষার্থীরা পড়তে আসতো এখানে। মূলত ২০১৬ সালের পর থেকে শিক্ষক-কর্মচারী সংকটে শিক্ষার পরিবেশে ব্যাপক ধস নামতে শুরু করে এখানে। বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য বিভাগসহ বর্তমানে প্রায় ৫’শ ছাত্রী রয়েছে এ বিদ্যালয়ে। চলতি বছরে ২৩ টি জিপিএ-৫ সহ প্রায় শতভাগ পাশ করেছে এখান থেকে।


ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম বলেন, বার বার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদাপত্র দিয়েও কাজ হচ্ছে না। ফলে সব সময় ভালো ফলাফল এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়  কৃতিত্বের সাথে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখা মফস্বলের এ বালিকা বিদ্যালয়টি চরম সংকটের মধ্যে পড়ে  যাচ্ছে। 


এদিকে স্থানীয় অভিভাবক সহ সচেতন মহলের দাবি এলাকার নারী শিক্ষার বাতিঘর এ স্কুলটির শিক্ষক-কর্মচারী সংকট কাটিয়ে স্কুলটির স্বাভাবিক  অবস্থা  ফিরিয়ে  আনার ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সহ  সব মহলের  আশু সুদৃষ্টি প্রয়োজন।