নওগাঁয় কঠোর লকডাউনেও বেড়েছে চলাচল

নিজস্ব প্রতিবেদক
রিফাত হোসাইন সবুজ, জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ
প্রকাশিত: শুক্রবার ১৬ই এপ্রিল ২০২১ ০৭:০২ অপরাহ্ন
নওগাঁয় কঠোর লকডাউনেও বেড়েছে চলাচল

সারা দেশের ন্যায় নওগাঁয় সর্বাত্মক লকডাউনের তৃতীয় দিন শুক্রবারে বৃদ্ধি পেয়েছে চলাচল। জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার কাঁচাবাজার, মাছ বাজার, পাইকারী বাজার, সাপ্তাহিক হাটগুলোতেও একেবারেই মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। দেখে মনে হচ্ছে এ যেন একদম স্বাভাবিক পরিবেশ। অথচ করোনা ভাইরাস সংক্রমনের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসাবে সারা দেশের ২৯টি জেলার মধ্যে নওগাঁকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে সংক্রমনের হার বেশি নওগাঁ সদরে। তাই দিন দিন জেলায় করোনা সংক্রমনের পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। 


সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর করোনা ভাইরাসের শুরু থেকে চলতি মাসের ১৬তারিখ পর্যন্ত জেলা সদরসহ ১০টি উপজেলা থেকে ১৪হাজার ৯টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। এরমধ্যে ১,৮৩৩টি করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩১জন রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বর্তমানে অন্যান্য উপজেলার চেয়ে সদর উপজেলায় করোনা সংক্রমনের হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হচ্ছে। 


শুক্রবার জেলা সদরের কাঁচাবাজার, মাছ বাজার, পাইকারী বাজারসহ বিভিন্ন স্থানগুলো ঘুরে দেখা গেছে যে এই স্থানগুলোতে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের নুন্যতম স্বাস্থ্যবিধিও মানা হচ্ছে না। সামাজিক দূরত্ব পালনের তো কোন কথাই নেই। অনেকেই আবার মাস্ক ছাড়াই বাজারগুলোতে হরহামেশাই চলাফেরা করছেন। অনেক সবজি, মাছ বিক্রেতাকে মাস্ক ছাড়াই পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। জেলা প্রশাসনের একাধিক দল শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করলেও এই স্থাগুলোর দিকে কোন নজর নেই। অথচ এই স্থানগুলো থেকেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমন অনেক বেশি হতে পারে বলেন মনে করছেন সচেতন মহল। 


অপরদিকে পুলিশের একাধিক দল শহরের মুক্তির মোড়, থানার মোড়, তাজের মোড়, বালুডাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচলকারী মানুষদের চলাচলের উপর নজরদারী করতে দেখো গেছে। তবুও শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ী, মোটরসাইকেল, রিক্সাসহ অন্যান্য ছোট ছোট যানবাহনের চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে।


অন্যান্য সবকিছু বন্ধ করে যদি বাজারগুলোতে নজরদারী বৃদ্ধি করা না হয় তাহলে এই সংক্রমনের হার কখনোই কমানো সম্ভব নয় বলেন মনে করছেন অনেকেই। ব্যক্তি সচেতনতাই পারে এই মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করতে। তাই এই সব জনগুরুত্বপূর্ন স্থানগুলোতে বিভিন্ন প্রয়োজনে আসা মানুষদের সচেতন করাসহ আইনের আওতায় আনতে হবে তা না হলে সরকারের লকডাউনের উদ্দ্যেশ্য পুরোপুরি সফল হওয়া সম্ভব নয়। 


নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: মুনজুর এ-মুর্শেদ বলেন পুরো জেলার মধ্যে বিশেষ করে জেলা সদরে যে ভাবে প্রতিদিন করোনা সংক্রমন বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই অনুপাতে কিন্তু আমরা স্বাস্থ্যবিধিগুলো তেমন ভাবে মানতে পারছি না। বিশেষ করে আমরা যদি নিজে থেকেই সচেতন না নই তাহলে যতই আইন পাশ করা হোক না কেন তাতে কোন লাভই হবে না।


তবুও আমাদের চেষ্টা করতে হবে মানুষদের সচেতন করার। কারণ এই রোগে কেউ আক্রান্ত হলে সে নিজেই ভুক্তভ’গি হবে না তার আশেপাশের সবাই আক্রান্ত হবে। তাই জনসমাগম স্থানগুলোতে প্রশাসনের নজরদারী আরো কঠোর করতে হবে এবং আইনের প্রয়োগ আরো বেশি করতে হবে যেন মানুষের মাঝে ভয়ের সৃষ্টি হয়। 


জেলা প্রশাসক মো: হারুন-অর-রশীদ বলেন সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করার জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনের একাধিক দল অভিযান পরিচালনা করছে। আগামীতে জনমুখর স্থানগুলোতে নজরদারী কঠো করা হবে। তবে আমাদের যার যার জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে।


নিত্য প্রয়োজনীয় দোকান ও বাজারগুলোতে গিয়ে আমরা ভিড় বা জটলা না করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই কেনাকাটা করতে পারি কিন্তু তা করছি না। এতে করে আমরা আমাদের নিজেদেরই ক্ষতি টেনে নিয়ে আসছি। তাই আতঙ্কিত না হয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন হয়ে নুন্যূতম স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।



 #ইনিউজ৭১/জিহাদ/২০২১