একের পর এক বিপদ আসছে। বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। আমাদের দেশেও মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে আমাদের আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা অবলম্বন ও ধৈর্য প্রদর্শন করতে হবে। মহামারির এই দিনগুলোতে আমাদের ধৈর্যধারণ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
একজন মুমিন জীবনের সব ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করেন আর এটিই ইসলামের শিক্ষা। ঈমানদারদের সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন-হে ঈমানদাররা! তোমরা ধৈর্যধারণ কর, ধৈর্যে প্রতিযোগিতা কর এবং সর্বদা আল্লাহর পথে প্রস্তুত থাক, আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা-আল ইমরান : আয়াত ২০০)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম একবার আনসারদের কিছু লোককে বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে তিনি (আল্লাহ) তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কখনও তোমাদের দান করা হবে না।’ (বুখারি)
হজরত আবু সাঈদ খুদরি ও হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফোটে, এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেন।’ (বুখারি)
ধৈর্য ধারণে যে দোয়া করব
মুমিন মুসলমান বিপদ-আপদে বিচলিত হয় না বরং ধৈর্যধারণ করে এবং আল্লাহর দরবারে এভাবে দোয়া করে-
- رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ
‘রাব্বানা আফরিগ আলাইনা সাবরাও ওয়া তাওয়াফফানা মুসলিমিন।’ (সুরা আরাফ: আয়াত ১২৬)
অর্থ: হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক! তুমি আমাদের প্রতি ধৈর্য অবতীর্ণ কর আর আত্মসমর্পণকারী অবস্থায় মৃত্যু দাও।’
- ربَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
‘রাব্বানাগ ফিরলানা যুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আমরিনা ওয়া সাব্বিত আকদামানা ওয়াংসুরনা আলাল কাওমিল কাফিরিন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৪৭)
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক! আমাদেরকে আমাদের পাপ ও আমাদের কাজের মধ্যকার বাড়াবাড়ি ক্ষমা কর। আর আমাদের পদক্ষেপকে দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত কর আর অস্বীকারকারী জাতির বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর।’
ধৈর্য ধারণকারীদের জন্য সুসংবাদ
যারা ধৈর্যশীল তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা সফলতার সুসংবাদ দিয়েছেন। ভয়, ক্ষুধা, ধন-সম্পদ ও জীবনের ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের পরীক্ষা করেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-‘আমি তোমাদের কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি সংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে- 'ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন' আমরা তো আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চিতভাবে তার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। এদের জন্যই রয়েছে এদের প্রভুর পক্ষ থেকে অনেক আশিস ও কৃপা আর এরাই হেদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৫-১৫৭)
সুতরাং বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা অবলম্বন করা এবং ধৈর্যধারণ করার বিকল্প নেই। বিশেষ করে যারা মহামারি করোনায় আক্রান্ত, তারা এবং পরিবারবর্গের মধ্যে যারা আক্রান্ত তাদের ধৈর্যধারণ করা জরুরি। পাশাপাশি অন্যদের ধৈর্যধারণের পরামর্শ দেই এবং তাদের সাহস জোগাই।দয়াময় প্রভুর দরবারে বিনীত প্রার্থনা, হে আল্লাহ! তুমি মুসলিম উম্মাহকে মহামারি করোনাভাইরাসের দিনগুলোতে এবং অন্যান্য বিপদে সর্বাবস্থায় সর্বোচ্চ ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান কর। তোমার রহমতের ছায়ায় সবাইকে স্থান দাও। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।