ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা, আনন্দ আর আবেগঘন পরিবেশে খাগড়াছড়িতে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় আয়োজন শারদীয় দুর্গাপূজা।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর ২০২৫) বিজয়া দশমীর দিন জেলার ৭টি ঘটপূজা ও ৫৮টি প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ৬৫টি পূজামণ্ডপে পাঁচ দিনব্যাপী এই মহোৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে। জেলার চেঙ্গী নদী, স্থানীয় ছড়া ও পুকুরগুলোতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ভক্তরা দেবী দুর্গাকে বিদায় জানান।
সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ছিল ভক্ত-দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। পানছড়ি, দিঘীনালা, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, গুইমারা, মানিকছড়ি, লক্ষিছড়ি, মহালছড়ি এবং সদর উপজেলার খাগড়াপুর দুর্গাপূজা মণ্ডপ, শ্রী শ্রী লক্ষ্মী-নারায়ণ মন্দির, শান্তিনগর গীতা আশ্রম ও আনন্দনগরসহ প্রতিটি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয় শেষ দিনের বিশেষ পূজা, দর্পণ বিসর্জন ও প্রার্থনা।
হিন্দু শাস্ত্রমতে, বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গা কৈলাসে প্রত্যাবর্তন করেন। এই বিদায় যেমন বেদনার, তেমনি প্রতীকীও। ভক্তদের বিশ্বাস, বিজয়া দশমীতে দেবীর সঙ্গে মানুষের ভেতরের কাম, ক্রোধ, হিংসা ও লালসার মতো অসুরিক প্রবৃত্তিরও বিসর্জন ঘটে। তাই ভক্তদের চোখে জল থাকলেও মনে শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের নতুন অঙ্গীকারের প্রত্যাশা জাগে।
দেবী বিসর্জনের আগে নারী ভক্তদের অংশগ্রহণে পালিত হয় ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলা। দেবীর চরণ থেকে নেওয়া সিঁদুর একে অপরের কপালে ছুঁইয়ে স্বামী ও পরিবারের মঙ্গল কামনা করেন নারীরা। পান- মিষ্টি নিবেদন শেষে উৎসবটি হয়ে ওঠে আনন্দঘন ও রঙিন।
বিকেলে সুবিধাজনক সময়ে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা। ঢাক-ঢোল, শঙ্খধ্বনি আর উল্লাসধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে শহরের রাস্তাঘাট। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবাই মিলে আবেগঘন পরিবেশে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানান।
খাগড়াছড়িতে এবারকার শারদীয় দুর্গোৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের অনন্য বার্তাও পৌঁছে দিয়েছে।