প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৩
সততা ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। একজন মুসলমানের জীবনে সততা শুধু একটি নৈতিক গুণ নয়, বরং এটি আল্লাহর নির্দেশিত একটি বাধ্যতামূলক আদর্শ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বহু জায়গায় মুমিনদের সত্যবাদী ও সৎ হতে বলেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সততার অনন্য উদাহরণ রেখে গেছেন যা আজও মুসলমানদের জন্য আদর্শ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
সৎ আচরণ মানুষের ব্যক্তিত্বকে উজ্জ্বল করে তোলে এবং সমাজে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়। ইসলামে সৎ মানুষের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “সততা মানুষকে সৎকর্মের দিকে নিয়ে যায় আর সৎকর্ম জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়।” (বুখারি ও মুসলিম)। এই হাদিস প্রমাণ করে যে সততা শুধু দুনিয়ার শান্তি নয়, আখিরাতের সফলতার পথও খুলে দেয়।
অন্যদিকে অসততা মানুষের জীবন ও সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। প্রতারণা, মিথ্যাচার, স্বার্থপরতা ইত্যাদি সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ অসততার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। আল্লাহ বলেন, “তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না।” (সুরা বাকারা: ১৮৮)। এই আয়াত দেখায় যে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত জীবন—প্রতিটি ক্ষেত্রেই সততার গুরুত্ব অপরিসীম।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সততার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি ব্যবসায় সততা ও সত্যবাদিতা বজায় রাখে, সে কিয়ামতের দিনে নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সাথে থাকবে।” (তিরমিজি)। বর্তমান সময়ে যখন প্রতারণা ও মিথ্যাচার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তখন এই হাদিস মুসলমানদের সততার প্রতি উৎসাহিত করে।
ইসলামের আলোকে একজন মুসলমানের ব্যক্তিগত জীবনে সততা এমন একটি গুণ, যা অন্যদের বিশ্বাস অর্জন করতে সাহায্য করে। পরিবার, কর্মক্ষেত্র, রাজনীতি বা সামাজিক ক্ষেত্রে সততা একজনের ব্যক্তিত্বকে মহিমান্বিত করে তোলে। একজন সৎ মানুষ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
বর্তমান যুগে যখন সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট চলছে, তখন সততার মূল্য আরও বেড়ে গেছে। ইসলামী দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সততা শুধু ব্যক্তিগত নয়, রাষ্ট্র পরিচালনায়ও প্রয়োজনীয়। নেতাদের জন্য সততা সবচেয়ে বড় গুণ, কারণ জনগণের বিশ্বাস অর্জনের জন্য এটি অপরিহার্য।
সততা মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করে। একটি সৎ সমাজে অন্যায়, দুর্নীতি ও প্রতারণা কমে যায়। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা যদি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সততা অবলম্বন করি, তাহলে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
সবশেষে বলা যায়, সততা ইসলাম ধর্মের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য যা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের কল্যাণ নিশ্চিত করে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনা মেনে সততার পথে চললে দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তি নিশ্চিত হয়। তাই আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সততাকে মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।