প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১০:৩৬
ইসলামে সত্যবাদিতা এমন এক গুণ যা একজন মুসলমানের চরিত্রের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। কোরআনুল কারিমের অসংখ্য আয়াতে সত্য কথা বলার নির্দেশনা এসেছে, আর মিথ্যা বলা বা প্রতারণাকে স্পষ্টভাবে নিন্দা করা হয়েছে। সূরা আল-আহযাবের ৭০-৭১ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য কথা বল, তাহলে তিনি তোমাদের কাজগুলোকে কল্যাণকর করবেন ও তোমাদের গুনাহ মাফ করবেন।” এই আয়াত স্পষ্ট করে দেয় যে সত্যবাদিতা শুধু নৈতিক দায়িত্বই নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও মাধ্যম।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জীবন ছিল সত্যবাদিতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। নবুওয়াত লাভের আগেও তিনি মক্কার মানুষের কাছে “আল-আমিন” তথা বিশ্বস্ত নামে পরিচিত ছিলেন। তার এই গুণের কারণেই মানুষ তার কথায় ভরসা করত এবং তার দাওয়াতের প্রতি আকৃষ্ট হত। একাধিক সহিহ হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন, “সত্যবাদিতা সৎকর্মের দিকে আহ্বান করে এবং সৎকর্ম জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়।”
সত্যবাদিতা সমাজে আস্থা ও স্থিতিশীলতা তৈরি করে। যখন মানুষ কথা ও কাজে সত্যবাদী হয়, তখন পারস্পরিক সম্পর্ক মজবুত হয় এবং সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী হয়। বিপরীতে মিথ্যা বলা, গোপন তথ্য বিকৃত করা বা প্রতারণা অবিশ্বাস ও বিভেদ সৃষ্টি করে। ইসলামে এজন্যই মিথ্যাকে মুনাফেকির অন্যতম লক্ষণ বলা হয়েছে।
কোরআনে মিথ্যার পরিণতি নিয়েও স্পষ্ট সতর্কবার্তা এসেছে। সূরা হজ্জের ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “মিথ্যা কথা পরিহার কর।” এর পাশাপাশি সূরা আন-নাহলের ১০৫ আয়াতে বলা হয়েছে, “মিথ্যা কেবল তারাই উদ্ভাবন করে, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে না; আর তারাই মিথ্যাবাদী।” এসব আয়াত প্রমাণ করে মিথ্যা বলা শুধু একটি নৈতিক ত্রুটি নয়, বরং ঈমানেরও ঘাটতি।
প্রাত্যহিক জীবনে সত্যবাদিতা চর্চা করার জন্য প্রথমে নিজের অভ্যন্তরীণ নিয়তকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে সঠিক তথ্য প্রদান, পারিবারিক জীবনে সৎ আচরণ, প্রশাসনিক দায়িত্বে স্বচ্ছতা এবং সংবাদ পরিবেশনে নির্ভুলতা—এসবই একজন মুসলিমের দায়িত্ব। ইসলামে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সত্যবাদিতা অপরিহার্য শর্ত।
রাসুল (সা.) এর সহচরদের জীবন থেকেও আমরা সত্যবাদিতার অনন্য উদাহরণ পাই। হযরত আবু বকর (রা.) কখনো মিথ্যা বলেননি, এমনকি জীবনের ঝুঁকি থাকলেও। হযরত উমর (রা.) ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সত্যবাদিতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন, তিনি আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠজন কারো পক্ষেও অন্যায়কে সমর্থন করতেন না।
আজকের বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তারে মিথ্যা খবর, বিভ্রান্তিকর তথ্য ও প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে পড়া সহজ হয়ে গেছে। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো কথা প্রচার না করা। সূরা হুজুরাতের ৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, “হে ঈমানদারগণ, যদি কোনো ফাসেক তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তা যাচাই কর।” এই আয়াত আধুনিক যুগেও সমান প্রাসঙ্গিক।
অতএব, সত্যবাদিতা কেবল ব্যক্তিগত গুণ নয়, বরং এটি সমাজ ও উম্মাহর অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য ভিত্তি। কোরআন ও হাদিসের আলোকে আমাদের প্রতিদিনের জীবনকে সত্যনিষ্ঠ করে গড়ে তুলতে হবে, যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয় এবং দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা লাভ করা যায়।