মুহাম্মাদ (সা.) বিশ্ব শান্তির বার্তাবাহক

Ziaul Hoque
জিয়াউল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২১, ১৬:৫

শেয়ার করুনঃ
মুহাম্মাদ (সা.) বিশ্ব শান্তির বার্তাবাহক

বসন্তের মাস রবিউল আউয়ালে ধরাকে আলোকিত করে জন্ম নিলেন হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বিশ্ব মানবতার জন্য শান্তি ও মুক্তির দূত হিসেবেই তিনি আগমন করেছেন। তাইতো কবি ও সাধক শেখ শাদি রাহ. গেয়েছেন-

‘বালাগাল উলা বি কামালিহি, কাশাফাদ দুজা বি জামালিহি; হাছুনাত জামিউ খিছালিহি, ছাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহি : ‘তাঁর সুমহান চরিত্রে তিনি পৌঁছে গেছেন সর্বোচ্চ মর্যাদায়। যার সৌন্দর্যের ঝলকে কেটে গেছে অন্ধকার। তাঁর চরিত্রে ফুটে ওঠেছে সব সুন্দর। দরূদ পড় তাঁর ও তাঁর পরিবারের ওপর।’তিনি হলেন বিশ্ববাসীর জন্য রহমত। রবিউল আউয়ালে মহান প্রভু তাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত করে পাঠিয়েছেন। এটি কোনো মানুষের কথা নয় বরং এ কথা বলেছেন স্বয়ং আল্লাহ-

وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا رَحۡمَۃً لِّلۡعٰلَمِیۡنَ

‘আর আমি তো আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।’

বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হয়ে তিনি কি নিয়ে এসেছেন। বিশ্ববাসীর রহমতের ছায়ায় অবস্থান করতে কী প্রয়োজন? হিজরি বছরের প্রথম বসন্ত রবিউল আউয়ালে তাঁর আগমনেই পূর্ণতা পেল বিশ্ব ও বিশ্বমানবতা। যে জিনিস পেলে বিশ্ববাসী পাবে পরিপূর্ণ শান্তি; তা নিয়ে তিনি বিশ্বনবিকে পাঠিয়েছেন এ ধরায়। মহান আল্লাহ বলেন-

هُوَ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَهٗ بِالۡهُدٰی وَ دِیۡنِ الۡحَقِّ لِیُظۡهِرَهٗ عَلَی الدِّیۡنِ کُلِّهٖ ۙ وَ لَوۡ کَرِهَ الۡمُشۡرِکُوۡنَ

তিনিই পথনির্দেশ (কুরআন) এবং সত্য দ্বীনসহ (জীবন ব্যস্থা ইসলাম) নিজ রাসুল প্রেরণ করেছেন, যাতে তাকে সব জীবন ব্যবস্থার উপর জয়যুক্ত করেন;  যদিও অংশীবাদীরা অপ্রীতিকর মনে করে।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ৩৩)

কেমন ছিল তাঁর সুমহান চরিত্র। যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে তিনি অজ্ঞতার যুগে অবিশ্বাসীদের কাছে ছিলেন ব্যক্তিসত্ত্বায় ‘আল-আমিন বা বিশ্বাসী’। যিনি সুমহান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে রবিউল আউয়ালে আগমন করেন এ ধরায়। আল্লাহ তাআলা তাঁর চারিত্রিক সনদ এভাবে তুলে ধরেন-

وَ اِنَّکَ لَعَلٰی خُلُقٍ عَظِیۡمٍ

আর নিশ্চয়ই আপনি সুমহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা ক্বলাম : আয়াত ৪)

হিজরি বছরের প্রথম বসন্ত তথা রবিউল আউয়ালে তিনি যে কোরআন নিয়ে এসেছেন। যে সুমহান চরিত্রের ঘোষণা নিয়ে এসেছেন। তাঁর সুমহান চরিত্রই তো উম্মতে মুহাম্মাদি তথা তাঁর অনুসারীদের আদর্শ। একাধিক আয়াতে এ ঘোষণাও দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ-

لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا

‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ; তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)

https://enews71.com/storage/ads/01JQ184AJV9F0T856X9BBSG85X.gif

لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡهِمۡ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ ؕ وَ مَنۡ یَّتَوَلَّ فَاِنَّ اللّٰهَ هُوَ الۡغَنِیُّ الۡحَمِیۡدُ

‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য তাদের (ইবরাহিম আ.-এর উত্তরসূরীদের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রত্যাশা করে; আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয়ই আল্লাহ তো অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত।’ (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ৬)

আল্লাহ তাআলা রবিউল আউয়ালে ভালোবেসে প্রিয় নবিকে বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম ভালোবাসার পাত্র হিসেবে প্রেরণ করেছেন। কারণ তিনিই ছিলেন মহান আল্লাহর ভালোবাসার পাওয়ার একমাত্র অনুসরণীয় আদর্শ। সে কারণেই মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন-

قُلۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُحِبُّوۡنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوۡنِیۡ یُحۡبِبۡکُمُ اللّٰهُ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ

‘(হে রাসুল! আপনি) বলে দিন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার (মুহাম্মাদ সা.) অনুসরণ কর; (তাহলেই কেবল) আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবন্ত কোরআন রূপেই এ পৃথিবীতে এসেছেন। তাঁর শুভাগমনে ইসলাম পরিপূর্ণতা পেয়েছে। সে কথাও আল্লাহ এভাবে তুলে ধরেছেন-

صِبۡغَۃَ اللّٰهِ ۚ وَ مَنۡ اَحۡسَنُ مِنَ اللّٰهِ صِبۡغَۃً ۫ وَّ نَحۡنُ لَهٗ عٰبِدُوۡنَ

‘(হে রাসুল! আপনি বলুন,) আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করলাম। আর রং এর দিক দিয়ে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক সুন্দর? আর আমরা তাঁরই ইবাদাতকারী।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৩৮)

সুতরাং প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শুভাগমনের মাসে সুন্নাতের হুবহু অনুসরণ; তাঁর রঙে রঙিন হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর রঙ ও ভালোবাসা পাওয়ার চেষ্টা করা ঈমানদার মুমিন মুসলমানের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। তবেই মহান আল্লাহ বান্দাকে ভালোবাসবেন; তার রঙে রঙিন করবেন। তাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবেন।সুতরাং উম্মতে মুসলিমাহর উচিত,প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা। প্রিয় নবির সর্বোত্তম আদশে নিজেদের উজ্জীবিত করা। এ হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করা-

হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে (আদর করে) বলেছেন, ‘হে আমার প্রিয় সন্তান! যদি তুমি পারো তবে সকাল-সন্ধ্যা রাত-দিন এভাবে অতিবাহিত কর যেন তোমার অন্তরে কারও জন্য কোনো হিংসা-বিদ্বেষ না থাকে, তবে তা-ই কর। তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমার অন্যতম সুন্নাত আদর্শ। আর যারা আমার সুন্নাত আদর্শকে (আমলের মাধ্যমে) ভালোবাসবে, তারা প্রকৃত আমাকেই ভালোবাসে; আর যারা আমাকে ভালোবাসে তারা আমার সঙ্গেই জান্নাতে থাকবে।’ (তিরমিজি)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রবিউল আউয়ালে বিশ্বনবির সীরাত ও উসওয়াতগুলো আকড়ে ধরার তাওফিক দান করুন। বিশ্বনবির সুমহান আদর্শগুলোকে হৃদয়ে ধারণ ও জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি

https://enews71.com/storage/ads/01JR36BQSKCPE69WB8Z3TARXE3.jpg

সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা

https://enews71.com/storage/ads/01JR3CX28Y9BM01PRE4TXCNDWF.jpg

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

হজযাত্রী নিবন্ধন সম্পন্ন, বাংলাদেশ থেকে সুযোগ পাবেন ৭৮,৫০০ জন

হজযাত্রী নিবন্ধন সম্পন্ন, বাংলাদেশ থেকে সুযোগ পাবেন ৭৮,৫০০ জন

২০২৬ সালের হজযাত্রী নিবন্ধন কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামি হজ মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে মোট ৭৮ হাজার ৫০০ জন হজ পালনের সুযোগ পাবেন। রোববার (১৬ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. তফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিবন্ধিত হজযাত্রীরা এখন হজ পোর্টালের (hajj.gov.bd) মাধ্যমে পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে তাদের তথ্য যাচাই করতে পারবেন।

দিনের শুরুতে যে দোয়া পড়তেন নবিজি (সা.)

দিনের শুরুতে যে দোয়া পড়তেন নবিজি (সা.)

দিনের শুরুতে ফজরের নামাজের সালাম ফেরানোর পরপর এ দোয়া পড়তেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এ আমলটি প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার। কেননা মুমিন মুসলমানের তো হালাল রিজিক, উপকারী জ্ঞান, কবুলযোগ্য আমলই জীবনে একমাত্র চাওয়া-পাওয়া। হাদিসের বর্ণনায় দোয়াটি এভাবে এসেছে- হজরত উম্মু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাজ পড়ে সালাম ফিরিয়ে (প্রতিদিন

আল্লাহর পরিচয় ও কর্তৃত্ব: কুরআনের আলোকে ব্যাখ্যা

আল্লাহর পরিচয় ও কর্তৃত্ব: কুরআনের আলোকে ব্যাখ্যা

আল্লাহ কে? এই প্রশ্ন মানবজাতির চিরন্তন অনুসন্ধান। হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী এই বিষয়ে পবিত্র কুরআনের আলোকে তুলে ধরেছেন মহান আল্লাহর পরিচয়, কর্তৃত্ব ও মানুষের প্রতি তার নির্দেশনার প্রকৃত রূপ। কুরআনের সূরা ইউনুসের তৃতীয় আয়াতে আল্লাহ নিজেই জানিয়েছেন, তিনি আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং বিশ্বজগতের শাসনকর্তা হিসেবে সমাসীন আছেন। তিনি বলেন, সৃষ্টির পর আল্লাহ কোনোভাবেই নিস্ক্রিয় নন বরং তিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন প্রতিটি ঘটনার

রমজান শুরু হতে বাকি ১০০ দিন, প্রস্তুতি শুরু মুসলিম বিশ্বে

রমজান শুরু হতে বাকি ১০০ দিন, প্রস্তুতি শুরু মুসলিম বিশ্বে

বছর ঘুরে আবারও ফিরে আসছে পবিত্র রমজান মাস। বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় ইতোমধ্যেই রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। ইসলাম ধর্মবিষয়ক তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘ইসলামিক ইনফরমেশন’ তাদের অফিসিয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছে—শনিবার (৮ নভেম্বর) পর্যন্ত রমজান শুরু হতে বাকি আছে ১০০ দিন। জ্যোতির্বিদ্যার হিসাব অনুযায়ী, ২০২৬ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারি মধ্যপ্রাচ্যে রমজান শুরু হতে পারে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্যোতির্বিদ্যা সংস্থা Emirates Astronomy Society-এর চেয়ারম্যান ইব্রাহিম

পবিত্র শুক্রবার: রহমত, বরকত ও ক্ষমার বার্তা

পবিত্র শুক্রবার: রহমত, বরকত ও ক্ষমার বার্তা

ইসলামে শুক্রবারকে বলা হয় ‘সপ্তাহের সেরা দিন’। এই দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের জন্য বিশেষ রহমত, বরকত ও মাফের দরজা খুলে দেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সূর্য উদয় হয়েছে এমন দিনের মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো শুক্রবার। এই দিনে আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছেন, এই দিনেই তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেছেন এবং এই দিনেই পৃথিবীতে নামানো হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম)। এই হাদিস থেকেই বোঝা যায়,