ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে রাজপথে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ৭ই ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন
ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে রাজপথে বিএনপি

এক বছর পর দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে আবারও রাজপথে সরব হওয়ার চিন্তা করছে বিএনপি। খালেদার জামিন না হলে রাজপথে পর্যায়ক্রমে কঠোর কর্মসূচির দিকে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। একই সঙ্গে সরকার পতনে একদফা আন্দোলন কর্মসূচিতে যাওয়ার কথাও ভাবছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে বিএনপি সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, রাজপথে জোরালো আন্দোলন করতে না পারায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পর্যবেক্ষণে আছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দল বেকায়দায় থাকায় আপাতত তাকে মহাসচিব পদ থেকে না সরালেও সুবিধাজনক সময়ে তার পরিবর্তে নতুন কাউকে ওই পদে বসাতে চান তারেক। কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে আন্দোলন করে মুক্ত করার জন্য লন্ডন থেকে তারেক রহমান মির্জা ফখরুলের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। মির্জা ফখরুল কারাবন্দী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করে এ বিষয়ে করণীয় জানতে চান। তখন খালেদা জিয়া তাকে কঠোর আন্দোলনে না যাওয়ার নির্দেশ দেন। তারপরও তারেক রহমান এসব কর্মসূচী না দিয়ে বার বার কঠোর কর্মসূচী পালনের নির্দেশ দিতে থাকেন। 

গত বৃহস্পতিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ভিডিওকলের মাধ্যমে বৈঠক করেন তারেক রহমান। ওই বৈঠকে বৃহস্পতিবার জামিন শুনানি পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর কোনো কারণে জামিন না হলে তারপর রাজপথে বড় আন্দোলন কর্মসূচির দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়। এর জন্য নেতা-কর্মীদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। সে অনুযায়ি ডিসেম্বরের ২৮ থেকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজপথে বড় ধরনের শোডাউনের বিষয়ে ভাবছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তারা মনে করেন যেহেতু বিষয়টি রাজনৈতিক, তাই শুধু আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজপথের আন্দোলনের বিষয়ে অঙ্গ সংগঠনগুলোকে ইতোমধ্যে কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে। তাতে ব্যর্থ হলে নতুন করে ওইসব অঙ্গ সংগঠন ঢেলে সাজানো হবে।

অপরদিকে, তারেক রহমানের নির্দেশনার পক্ষে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সায় আছে কিনা, তা জানতে মির্জা ফখরুল দলের সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। তখন মুখে কিছু সিনিয়র নেতা কঠোর আন্দোলনের কথা বলরেও বাস্তবে কেউ রাজপথের আন্দোলনে নামতে রাজি হন নাই। এসব কারণে মির্জা ফখরুল কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী পালনও শুরু করতে পারেননি। সম্প্রতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান দলের কিছু নেতাকর্মীকে নিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে হাইকোর্টের সামনে যানবাহন ভাংচুরসহ ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। যদিও এর এক ঘণ্টা পর পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তবে হঠাৎ মহাসচিবের পরিবর্তে অন্য নেতার নেতৃত্বে বিএনপি রাজপথ উত্তপ্ত করার বিষয়টি ব্যাপক জল্পনা কল্পনার সৃষ্টি করে। আর মির্জা ফখরুলকে বেকায়দায় ফেলতেই তারেক রহমানের অনুসারীরা নোমানকে দিয়ে রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচী পালন করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে মির্জা ফখরুল বেকায়দায় পড়েন।

জানা যায়, দলীয় কার্যালয়ে লেঃ জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান ও এম মোর্শেদ খানের পদত্যাগপত্র জমা দেয়া হলেও মির্জা ফখরুল বিষয়টি জানেন না বলায় তারেক রহমান তার ওপর নাখোশ হয়েছেন। তারেক রহমান মির্জা ফখরুলের এমন অবস্থান মেনে নিতে পারছেন না। তারেক রহমানসহ লন্ডন প্রবাসী দলের কিছু নেতার কারণে, বিএনপির ভেতর পরস্পরিক অবিশ্বাস বেড়ে চলছে। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই দলে চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে। পারস্পরিক অবিশ্বাস আর কাদা ছোড়াছুড়ি কারণে সর্বস্তরে দলীয় কর্মকান্ডে অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। 

ইনিউজ ৭১/এম.আর