প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ১১:৭
জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক আলোচনা জমে উঠেছে পিআর বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি নিয়ে। বিএনপি স্পষ্ট করেছে, তারা বিদ্যমান পদ্ধতিতেই নির্বাচন চায়, পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে দলটি দীর্ঘদিন ধরেই অবস্থান নিয়ে আসছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একটি জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের কাছ থেকে বিএনপি প্রত্যাশা করছে, তারা যেন এই ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে একই সুরে কথা বলেন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এ অবস্থান উপস্থাপন করেন।
সম্প্রতি গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে এই বার্তা স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির পক্ষে বৈঠকে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ, যেখানে জোটের অন্য নেতাদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপার রাশেদ প্রধান, এলডিপির তমিজ উদ্দিন টিটু প্রমুখ। বৈঠকে বিএনপি ব্যাখ্যা করেছে, বাংলাদেশে আনুপাতিক নির্বাচনের ইতিহাস নেই এবং এটি দেশের বাস্তবতায় প্রযোজ্য নয়।
বৈঠকে আরও বলা হয়, আনুপাতিক নির্বাচনে ভোটাররা জানবেন না কে হবেন তাদের এমপি, ফলে জন-প্রতিনিধিত্বের জবাবদিহিতা থাকবে না। বিএনপির আশঙ্কা, এই পদ্ধতির প্রস্তাব আসলে একটি গোপন উদ্দেশ্য লুকিয়ে রয়েছে— হয় নির্বাচন বিলম্বিত করা অথবা নির্বাচনই না হওয়া। এক্ষেত্রে বিএনপি বলছে, তার আগেই পিআর পদ্ধতি স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
সংসদের নারী আসন এবং উচ্চকক্ষ নিয়েও আলোচনায় এসেছে বিএনপির অবস্থান। দলটি নারীদের জন্য ১০০টি আসনে সম্মত হলেও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসেনি। উচ্চকক্ষ প্রবর্তনের কথা থাকলেও জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন নিয়ে তাদের আপত্তি রয়েছে, কারণ তারা এটিকে সাংবিধানিকভাবে সাংঘর্ষিক মনে করে।
এদিকে, যুগপৎ আন্দোলনে শরিকদের উপযুক্ত মূল্যায়নের আশ্বাসও দিয়েছে বিএনপি। দলটি বলেছে, উপযুক্ত প্রার্থীদের ধানের শীষ প্রতীক ছাড়াও সংসদের উচ্চকক্ষে স্থান দেওয়ার কথাও বিবেচনায় রয়েছে। তবে যাদের ধানের শীষ দেওয়া সম্ভব নয়, তাদেরও রাজনৈতিকভাবে মূল্যায়ন করা হবে।
বৈঠকে পুরনো একটি প্রসঙ্গও উঠে আসে— গত বছর জোটের ছয় নেতাকে প্রাথমিক চিঠি দেওয়া। তখন অনেকেই এটিকে প্রাথমিক মনোনয়ন হিসেবে দেখেছিলেন, যা নিয়ে জোটে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছিল। তবে বিএনপি পুনরায় ব্যাখ্যা দিয়েছে, ৬৪ জেলায় ওই চিঠি দেওয়া হয়েছিল এবং তা মনোনয়নের নিশ্চয়তা ছিল না।
শেষতক, বিএনপি বলেছে, সংস্কার ও বিচার কার্যক্রমের অগ্রগতির পরেই আসন বণ্টনের বিষয়ে মিত্রদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হবে। ২০১৮ সালে বিএনপি ৫৯টি আসন ছেড়ে দিলেও এবার যুগপৎ শরিকদের সর্বোচ্চ ৫০টি আসন ছাড় দেওয়ার কথা ভাবছে দলটি। প্রার্থী ‘যোগ্য’ ও ‘গ্রহণযোগ্য’ হলে তাদের গুরুত্ব দেওয়া হবে, তবে ঐক্য রক্ষায় দুর্বল প্রার্থী হলেও কিছু আসনে ছাড় দেওয়া হতে পারে।