প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ১২:৪৭
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সাম্প্রতিক সংশোধনীতে রাজনৈতিক দলকে বিচারের আওতায় আনার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করেন, দেরিতে হলেও সরকার সঠিক পথে এগোচ্ছে এবং তারা শুরু থেকেই আইন-আদালতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিচার চেয়ে এসেছে। এই অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে শনিবার রাতে গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকে নেতারা মত দেন, আদালতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগের সঙ্গে বিএনপির অবস্থান মিল রয়েছে এবং এ নিয়ে দল আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। তবে তারা একযোগে প্রশ্ন তোলে, বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত থাকলে নির্বাচনের ভবিষ্যৎ কী হবে? এতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আইনশৃঙ্খলার জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলেও তারা মনে করেন।
বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, বিচার চলবে—এটা এক কথা, কিন্তু বিচার শেষ হতে কতদিন লাগবে, সেটি সরকার বলেনি। যদি ছাত্ররা এই অবস্থায় দাবি তোলে যে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনও স্থগিত থাকবে, তাহলে রাজনৈতিক সঙ্কট ঘনীভূত হতে পারে। এ অবস্থায় আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা, সময়সীমা ও রাজনৈতিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বক্তব্য না এলে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি মনে করে, আওয়ামী লীগের বিচার দাবির পেছনে তাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অবস্থান ছিল। ১০ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি লিখিতভাবে আওয়ামী লীগকে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দেয়। তখন থেকেই তারা এই সিদ্ধান্তের দিকে সরকারকে আহ্বান জানিয়ে আসছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বলেন, সরকার চাইলে আইনগত পথেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারে। বিএনপি কখনোই সহিংস পথ বা অসাংবিধানিক পন্থার সমর্থন করেনি।
এদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করে আসছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও ছাত্র-জনতা। বিএনপি সরাসরি এই কর্মসূচিতে না থাকলেও পরিস্থিতি ঘিরে রাজনীতি নতুনভাবে সরব হয়ে উঠেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী এনে রাজনৈতিক দল, অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকেও বিচারের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলাকালীন আওয়ামী লীগের সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, দলটির নীতি-নির্ধারকরা মনে করেন এনসিপির আন্দোলন এবং সরকারের সিদ্ধান্ত পরস্পর সমন্বিত, এক ধরনের ‘ফ্রেন্ডলি ম্যাচ’। তবে তারা এটাও বলছেন, যতক্ষণ না বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গতি নিশ্চিত হয়, ততক্ষণ বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া হবে না। দল পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী কৌশল ঠিক করবে।