সংসদ বিলুপ্ত করে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
এম. কে. রানা - বার্তা প্রধান ইনিউজ৭১
প্রকাশিত: শনিবার ৫ই নভেম্বর ২০২২ ০৬:৫৫ অপরাহ্ন
সংসদ বিলুপ্ত করে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে: মির্জা ফখরুল

বরিশালে সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে বিএনপির বিভাগীয় গণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সমাবেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন সরকার গঠনের দাবি করেন দলের নেতারা। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকারের অধীনে আর নির্বাচন হবে না। সংসদকে বিলুপ্ত করে, সরকারকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তার দায়িত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেই নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নতুন করে নির্বাচন হবে এবং সেই নির্বাচনের মাধ্যমে সকলের গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে সরকার গঠন করবে। 


বরিশালে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে ডাকা হয়েছে একের পর এক পরিবহন ধর্মঘট। শহরের প্রবেশপথে বাধা ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। তারপরও সমাবেশস্থল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক) জনতার ঢল নামে। বেলা ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বাধ্য হয়ে ১১টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ মঞ্চের মাঝখানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য চেয়ার খালি রাখা হয়।


শনিবার বেলা ১১টার দিকে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ প্রয়াত এবং বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নিহত নেতাকর্মীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া-মোনাজাত করা হয়।


বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহামুদ চৌধুরী, ড. আব্দুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, যুগ্ম মহাসচিব হারুন উর রশিদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাবিব উন-নবী সোহেল সহ কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আজ আওয়ামী লীগ বর্গীর রূপ নিয়েছে। ভোটের অধিকার নিয়ে একবার নয়, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই ভোট চুরি করে। তারা সন্ত্রাস করবে, চুরি করবে এটা হয় না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে তারা। নতুন বুদ্ধি এঁটে নতুন কমিশন দিয়ে আবার কৌশলে ভোট চুরির চিন্তা করছে। কিন্তু এই হাসিনা-এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না।


মির্জা ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করতে হবে। এখন উন্নয়ন ছাড়া কিছুই দেখা যায় না! কিন্তু বাস্তবে গেলে কোনো কিছুতেই হাত দেওয়া যায় না। আমরা মুক্তি চাই, এ থেকে পরিত্রাণ চাই। আমাদের এই আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়; খালেদা জিয়ার জন্য নয়; তারেক রহমানের জন্য নয় কিংবা আমাদের নেতাদের জন্য নয়। এ আন্দোলন জাতি ও দেশের প্রয়োজনে সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার জন্য।


সমাবেশে প্রধান বক্তা ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ। তাই লাইভ টেলিকাস্ট নাই। রাজপথ, রেলপথ, আকাশপথ সবকিছুই বন্ধ। তারপরও আজ গোটা বরিশাল শহর জনসভার শহর, মিছিলের শহর। তাহলে সব বন্ধ করে কি লাভ হলো। সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে বরিশালে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো। তিনি বলেন, ‘এ সরকারকে বিদায় জানাতে হবে ভোটের মাধ্যমে। না হলে দেশের আর কিছু বাকি থাকবে না। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়, ইভিএমে নির্বাচন নয়। ১৫ বছর আগে আমার যে ভাই ভোটার হয়েছে সে বলতে পারবে না ভোট কেমন।’


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া চাইলে আওয়ামী লীগের মতো গুম-খুন করে ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। তিনি গণতন্ত্র বিশ্বাস করেন তাই দেশের শান্তি ও উন্নয়নের জন্য ক্ষমতা ধরে রাখেননি। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন আর ২০১৮ সালে নিশিরাতের নির্বাচনে অবৈধভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। পুলিশ-র‌্যাব-সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে এখন টিকে রয়েছে। আগামী দিনে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।


বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বরিশালের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন কাকে বলে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি দুর্বিষহ করেছে আওয়ামী লীগ। এ দেশে শিক্ষা নেই, সততা নেই। সরকারের যারা আছে মিথ্যা ছাড়া কিছু বলে না। আওয়ামী লীগ যা বলে তা করে না। আর যা করে তা বলে না। সুস্থ রাজনীতি নেই, ব্যাংকে টাকা নেই। এই যে মিডিয়াগুলো আছে, আমাদের বক্তব্যগুলো এডিট করে প্রচার করবে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই।


বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে একজন পরারষ্ট্রমন্ত্রী আছেন। তিনি ভারতে গিয়ে এই সরকারকে বহাল রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। মানুষ কষ্টে আছে, না খেয়ে আছে তার কোনো খোঁজ রাখে না। অথচ ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিদেশে গিয়ে ধরনা দিচ্ছে।


বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেন, এখন আর জনগণের ভোট লাগে না। এক কোটি ৫০ লাখে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হওয়া যায়। 


বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। শুধু নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। তারেক রহমান বীরের বেশে নয়, রাজার বেশে আসবেন বাংলায়।


ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ কী করলো, বাধা দিয়ে একদিনের সমাবেশ তিন দিনে শেষ করলো। ষড়যন্ত্র করে খালেদা জিয়া-তারেক রহমানকে একের পর এক মামলা দিয়েও বিএনপিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না, এর প্রমাণ আজকের জনসমুদ্র।


বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেন, এ সরকার থাকলে অদূর ভবিষ্যতে চাল ও গমের দাম সেঞ্চুরি করবে। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনার জেলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে, প্রস্তুতি নিয়েন। চাচাতো, মামাতো, খালাতো ভাইয়ের খাওন বরিশালে নাই। তাদের কথা শোনার টাইম নাই বরিশালে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, দিনের ভোট রাতে করা যায়। কিন্তু এভাবে জনসমুদ্রে পরিণত করা যায় না। 


বিএনপির অপর যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সরকারি দলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রত্যেকটি জিনিসের পয়েন্টে পয়েন্টে হিসাব করা হবে। জনগণের আদালতে সবকিছুর বিচার হবে। আমার মানুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করে যাচ্ছি। এ আন্দোলন সফল হবে বলে তিনি দাবি করেন। 


বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, আজকের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। আজ বেতন না বাড়লেও নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ লড়াইয়ে বরিশালের মানুষ রক্ত দিয়েছে। তাই তাদের কখনোই দাবিয়ে রাখা যাবে না। এ সরকারে পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরে যাবো না।


এ সময় সমাবেশে অংশ নেয়া হাজার হাজার নেতাকর্মী সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেয়। সেই সাথে তারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান। এদিকে সমাবেশের একদিন আগে থেকে অর্থাৎ শুক্রবার সকাল থেকে বরিশালে ৬ জেলায় ধর্মঘটের কারণে বাস, লঞ্চ, থ্রি হুইলার, খেয়াঘাট বন্ধ থাকে। এ কারণে সমাবেশে আসতে নানা ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় বিএনপির নেতাকর্মীদের। বরিশাল বাস মালিক সমিতির ডাকা এই ধর্মঘট শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে অর্থাৎ সমাবেশ চলাকালীন পুরো সময় জুড়েই বিভাগের ৬ জেলায় দূরপাল্লা ও আভ্যন্তরিণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। তবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দাবি, গণসমাবেশ বানচাল করতেই এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে।


মূলত নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন, গুম ও খুনের প্রতিবাদ, দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মুক্তি ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশের ফেরার সুযোগ তৈরির জন্য সব মামলা প্রত্যাহারসহ নানা দাবিতে দলটি এ সমাবেশের এ ধারাবাহিক কর্মসূচি শুরু করেছে। এটি শেষ হবে ঢাকার সমাবেশের মধ্য দিয়ে।


ভোগান্তিতে মানুষ:

বিএনপির সমাবেশ ঘিরে ধর্মঘটের কারণে বরিশালে খেয়া পারাপারের ট্রলার, লঞ্চ, বাস, মাইক্রোবাস, মাহিন্দ্রা টেম্পু, সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে বিএনপির সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও ভোগান্তিতে পরেন। বাধ্য হয়ে অটোভ্যান, অটোরিকশা, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে সড়ক-মহাসড়ক হয়ে সাধারণ মানুষ গন্তব্যে যাচ্ছেন। অপরদিকে খেয়া পারাপারের নৌকা-ট্রলার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদী পথেও মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। অনেকেই বাধ্য হয়ে জেলেদের নৌকায় নদী পাড়ি দিচ্ছেন। আর নদীবেষ্টিত বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে আসা মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বিশাল বিশাল নদী পাড়ি দিচ্ছেন ট্রলার, বাল্কহেডে। নিয়মিত গণপরিবহনগুলো বন্ধ থাকায় এসব যানবাহনের চালকদের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা। 


ব্যাটারিচালিত ভ্যানের চালক মানিক বলেন, বাস চলাচল বন্ধ, সেইসঙ্গে মহাসড়কে মাইক্রোবাস, মাহিন্দ্রা টেম্পুও চলছে না। এ অবস্থায় স্বল্প দূরত্বে যাওয়া মানুষরা ভ্যানেও যেতে চাচ্ছেন। তবে নথুল্লাবাদ ও রুপাতলী থেকে বিএনপির সমাবেশস্থলে মানুষ বেশি যাচ্ছে ভ্যানে। কারণ এক ভ্যানে ৭-৮ জন যাওয়া যায় কিন্তু রিকশায় তিন জনের বেশি সম্ভব হয় না। রিজার্ভ নিলে যাত্রীদের লাভই বেশি হচ্ছে।


এদিকে ধর্মঘটের কারণে মহাসড়কগুলোতে প্রভাব পড়লেও বরিশাল শহরের মধ্যে তেমন প্রভাব পড়েনি। আজ সকাল থেকে শহরের রাস্তায় প্রচুর খালি রিকশা দেখা গেছে। তবে নগরের চৌমাথা, রুপাতলী, আমানতগঞ্জ, নাজিরের পুল থেকে শহরতলীতে যেতে রিকশাসহ সব যানবাহনেই বেশি ভাড়া চাওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।


এদিকে মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা মানুষরা পায়ে হেঁটেই যাতায়াত করছেন বলে জানিয়েছেন অটোরিকশা চালক কালাম। তিনি বলেন, শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ পায়ে হেঁটে বিএনপির সমাবেশস্থল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে যাচ্ছেন। হাতে গোনা অল্প কিছু লোক রিকশা-অটোরিকশায় চড়ছেন। আর নৌ-পথে আসা যাত্রীরা নগরীর কেডিসি কলোনী ও চাঁদমারী এলাকায় নেমে পায়ে হেঁটেই সমাবেশস্থলে যাচ্ছেন।


সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বিএনপির বিভিন্ন জেলা উপজেলার কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে ট্রাক, পিক-আপ, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলসহ ছোট বড় যানবাহনে করে এই গণ সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায়। বেলা গড়াতেই হাতে বাশ ও লাঠি নিয়ে মিছিলে মিছিলে সমাবেশস্থলে নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। এসময় তারা সরকার-বিরোধী নানা স্লোগান দেন। সেইসাথে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন। সমাবেশে আসা আগতদের হাতে ছিল বিএনপির প্রধান নেতাদের প্রতিকৃতি, দলীয় পতাকা সেই সঙ্গে সরকারবিরোধী স্লোগান এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সম্বলিত পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন।


এদিকে বরিশালের সমাবেশে আসার পথে বরগুনায় ছগির খান (৩০) নামের এক বিএনপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের বিষখালী নদীতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ছগির নলটোনা ইউনিয়নের মোস্তাকপুর বাজারে ইলেকট্রিক ও মোবাইল সার্ভিসিংয়ের ব্যবসা করত। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে সে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ছগিরের চাচা পলাশ খান জানান, বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের বিষখালী নদীতে বরিশালগামী একটি ট্রলার থেকে আরেকটি ট্রলারে লাফ দিয়ে যাবার সময় আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পরে তাকে আহত অবস্থায় বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে বরগুনা থানার ওসি আলি আহম্মেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর জেনেছেন। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


অপরদিকে গণ সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে পারেন, এমন আশঙ্কা ও হয়রানি এড়াতে অনেকে কয়েকদিন আগে থেকেই বরিশাল নগরী ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। আবার অনেকেই আগের রাতে সমাবেশের মাঠে তাঁবু খাটিয়ে না হলে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটিয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই বঙ্গবন্ধু উদ্যান বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ভরে যায়। 


এদিকে সকাল ৯টার পর বরিশালে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েন মিডিয়া কর্মীরা। সমাবেশ কাভার করতে যারা বরিশালে অবস্থান করছিলেন তাদেরকে ঢাকায় সংবাদ প্রেরণের জন্য বিভিন্ন প্রান্তে ছুটাছুটি করতে হয়েছে। লঞ্চ, বাস, তিন চাকার অটো, নৌকা সব বন্ধ করে সারা দেশের সাথে বরিশালের যোগাযোগ আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ায় পুরো বিশ্বের সাথে বরিশাল এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।


বিএনপির মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা নেতা জহির উদ্দিন স্বপন বলেন যে পটুয়াখালী, ভোলাসহ বেশ কিছু জায়গায় বিএনপি কার্যালয়ে হামলা হলেও বরিশালে সমাবেশ আয়োজনের ক্ষেত্রে প্রশাসনের দিক থেকে অসহযোগিতা তারা পাননি।