আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেছেন, ‘তারেক জিয়া পলাতক আসামি। এই তারেক জিয়া বিদেশে বসে বলে, ’৭৫-এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। ওই তারেক রহমানকে বলতে চাই, আপনার বাবার (জিয়াউর রহমান) লাশের চিহ্নও কিন্তু পাওয়া যায়নি। সেদিন কিন্তু সংসদ ভবনের সামনে বাক্সবন্দি লাশের নামে পতেঙ্গার চারটি পচা তরমুজ ছিল। এই তারেক জিয়ার অবস্থা একদিন তার বাবার মতোই হবে। কেউ তাকে রক্ষা করতে পারবে না। এটা হবে ইতিহাসের বদলা।’
তিনি বলেন, ‘এই স্বদেশভূমি আমাদের উপহার দিয়েছে বঙ্গবন্ধু। আজ অনেকেই সেই বঙ্গবন্ধুকে ছোট করে কথা বলে। স্বাধীনতার চেতনা এবং মূল্যবোধ হত্যা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই দেশকে পাকিস্তানের নব্য সংস্করণ করতে চায়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই শক্তিই দেশকে পাকিস্তান করার জন্য সব চেষ্টা করেছে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সব শহীদের স্মরণে বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আসন্ন নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা (বিএনপি) বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আপনারা নির্বাচনে যাবেন না। নির্বাচন বানচাল করার জন্য হুংকার দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের জন্য রাজপথে আন্দোলনের ভয় দেখাচ্ছেন। এই হুংকার দিয়ে লাভ নেই। সেই শক্তি আপনাদের (বিএনপি) আর নেই। মনে রাখবেন, পেছনের দরজা এবং অন্ধকার গলিপথ দিয়ে ক্ষমতায় আসার সুযোগ আর হবে না।’
আব্দুর রহমান বলেন, ‘কোনো সরকারের অধীন আর কোনোদিন নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীন। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন গ্রহণে কমিশন সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর নির্বাচনকালীন দৈনিন্দিন রুটিন কাজ করার জন্য সরকারের প্রধান থাকবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সেই নির্বাচনে আপনারা (বিএনপি) না-ও আসতে পারেন। কিন্তু হুংকার দিয়ে লাভ নেই। আপাতত নিজেদের ঘরের দিকে তাকান। আপনাদের নিজেদের ঘরেই তো আগুন লেগেছে।’
বিএনপির নেতাদের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘মানুষ কত অমানুষ হতে পারে? বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের জন্য যে দুঃখ প্রকাশ ও নিন্দা প্রকাশ তো দূরে থাক, তারা বঙ্গবন্ধুর হত্যা নিয়ে সব সময় কৌশলী বক্তব্য দেন। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের দায়-দায়িত্ব খুনি জিয়াউর রহমান এড়াতে পারবে না। এই খুনের মদত দেয়া এবং নৈপথ্যে কলকাঠি কিন্তু জিয়াউর রহমানই নেড়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিষয়ে জিয়াউর রহমান আগে থেকে জানত।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আব্দুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। পিতার হত্যার বিচার করেছেন। কিন্তু আজ বাংলার মানুষ খুনি জিয়ার মরণোত্তর বিচার চায় এবং এই বিচার করতে হবে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সব সদস্যের স্মৃতিচারণা করে ছাত্রলীগের সাবেক এ নেতা আরও বলেন, ‘সেদিন সকালের সূর্য তখনও ওঠেনি। অথচ তখন ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর বুকে গুলি চালালেন। বঙ্গবন্ধুর বুকের তাজা রক্ত সিঁড়ি বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। সেদিন পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার পানি বঙ্গবন্ধুর রক্তে লালে লাল হয়ে গিয়েছিল। সেদিন ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের সঙ্গী, ছোট শিশু শেখ রাসেলসহ পরিবারের সব সদস্যকে হত্যা করেছিল।
সেদিন ঘাতকগোষ্ঠী বলেছিল, শেখ মুজিবকে হত্যা করেছি, সেই হত্যার বিচার বাংলার মাটিতে হবে না। ওরা বলেছিল, এই বাংলাদেশে আর কখনো শেখ মুজিবের নাম উচ্চারিত হবে না। জয় বাংলা ধ্বনি আর উচ্চারিত হবে না। সেদিন তারা বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাসের নিষিদ্ধ নাম করেছিল। কিন্তু আজ সারা বাংলায় বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারিত হচ্ছে। জয় বাংলা উচ্চারিত হচ্ছে। কেউ এই ধ্বনি বন্ধ করতে পারেনি, পারবেও না। কারণ, বঙ্গবন্ধু মরে নাই। বঙ্গবন্ধু মরতে পারে না। বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন বাংলার ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়ে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলায় সূর্য উঠবে, সুন্দর চাঁদ উঠবে ততদিন বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবে।’
ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।