প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ৩:৫৭
সাভারের আশুলিয়ার তৈয়বপুর খেলার মাঠে করা হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কয়েক হাজার লোকের আগমন ঘটতে যাচ্ছে এখানে। এদিকে নেতাকর্মীদের ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে খেলার মাঠ।
সকাল গড়িয়ে তখন বিকেল, বিভিন্ন ইউনিয়ন পাড়া মহল্লা থেকে আসতে শুরু করেছে নেতাকর্মীদের মিছিল, আর এই মিছিল দেখেই বোঝা যাচ্ছে কে কার থেকে বেশি লোক জমায়েত করতে পাড়ে এই খেলার মাঠে। কারন আজ যে এখানে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ঘোষনা করা হবে ইউনিয়ন কমিটি।
সাধারণ মানুষের কথা বাদই গেলো সয়ং প্রতিমন্ত্রী করোনার তোয়াক্কা না করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে নাম ঘোষণা করেছেন নতুন পদধারীদের৷ তবে সভাস্থলে আসা লোকজন দের দেখেই বোঝা যাচ্ছে স্বাস্থ্য বিধির কোন বালায় নেই তাদের মাঝে।
এমনই দৃশ্য সাভারের আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের তৈয়বপুর ফুটবল খেলার মাঠে বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখা গেছে।
বর্তমানে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে যখন নতুন করে বিধিনিষেধ চলছে তখন আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের আয়োজনে মাঠে চলছে এই সম্মেলন।
সরজমিনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিকী সম্মেলনের আয়োজন করা হয় । তৈয়বপুর মাঠ এলাকায় সমাবেশ স্থলে দুপুর দুই টার পর থেকেই দলে দলে মিছিল নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকে। এসময় গাদাগাদি করে নিয়ে আসা মিছিলগুলোতে কারো মুখেই দেখা যায়নি মাস্ক । এছাড়া সামাজিক দুরুত্ব বজায় না রেখেই গাদাগাদি করে আসনগুলোতে বসানো হয়েছে লোকজন।
অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্খাপন ও ত্রান প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান প্রধান অতিথি হিসিবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও আশুলিয়া থানা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক ফারুক হাসান তুহিন উদ্ভোধক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ।
এসময় সেখানে প্রধান অতিথি আগামী তিন বছরের জন্য মুজিবর রহমান শাহেদ ও সাধারন সম্পাদক হিসেবে মুসার নাম ঘোষনা করে নতুন কমিটি করা হয় ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, নতুন করে করোনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সময়ে হাজার লোক নিয়ে জনসমাগম করার প্রয়োজন ছিল না । এই সমাবেশের কারনে আমাদের এলাকায় করোনা সংক্রমনের প্রকোপ বেড়ে গেলো । ঘরোয়াভাবে অল্প লোকজন নিতেও তারা অনুষ্ঠানটি শেষ করতে পারতো। । অথচ সেটা না করে চার পাঁচ হাজার লোকজন নিয়ে সমাবেশ করে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কাই করা হয়নি ।
তবে আশুলিয়া থানা সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর সদস্য ব্যারিষ্টার ইমাম হাসান ভুইয়া বলেন, সরকার আমাদের জন্য যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সেই বিধিনিষেধগুলো তখনি কার্যকর হবে। যখন সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ সেই বিধিনিষেধগুলো মেনে চলবেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই বিষয়গুলি তদারকি করবেন। যেভাবে সংক্রমন ভেরিএন্ট বেড়ে চলছে এরকম পরিস্থিতে বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় আয়োজন এই মুহূর্তে করা হয়। সেটি সেই এলাকার জন্য মানুষের মধ্যে করোনা বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক ফারুক হাসান তুহিন বলেন, অনুষ্ঠানটি পুর্ব ঘোষিত ছিল, সে কারনেই এই বিধি নিষেধে আমরা অনুষ্ঠানটি বন্ধ রাখতে পারি নাই । তবে স্বাস্থ্য বিধি মিনে দুইশত লোক নিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ করার হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, আজকে সাভারে কোভিড আক্রান্তের হার ৫০ শতাংশ। যা খুবই উদ্বেগজনক , কোন ধরনের পাবলিক সমাবেশ করতে হলে স্বাস্থ্য বিধি মেনে ছোট পরিসরে করার নির্দেশনা রয়েছে । যদি আমরা সচেতন না হই তাহলে এই আক্রান্তের সংখ্যা আরো প্রকোট আকারে ধারনা করবে । তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের প্রজ্ঞাপন মেনে এই ধরনের অনুষ্ঠান না করাই উচিত ।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, প্রজ্ঞাপনে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে । নতুন করে নিয়ে করোনা সংক্রমন বৃদ্ধি পাওয়ায় বিধি নিষেধ করা হয়েছে ১শত জনের অধিক লোক নিয়ে কোন সমাবেশ করা নিষেধ রয়েছে । তবে এতো লোক নিয়ে এই ধরনের সমাবেশ করার কথা নয় । তিনি মন্ত্রী মহোদয় ও স্থানীয় থানা পুলিশের সাথে কথা বলে দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জানিয়েছেন ।