ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সম্প্রতি ঘটতে থাকা পুশইন ঘটনাকে "সুপরিকল্পিত ও ন্যাক্কারজনক" আখ্যা দিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। সোমবার (১২ মে) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি জানান, ৭ ও ৮ মে দুই দিনে বিজিবি ২০২ জনকে পেয়েছে যাদের বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তে পুশইন করেছে। এসব ব্যক্তি জনবসতিহীন এলাকায় পুশইন করা হয়েছে, যেখানে নজরদারি সীমিত থাকে। এদের মধ্যে ৩৯ জন রোহিঙ্গাও রয়েছে, যাদের মধ্যে কেউ কেউ আগে বাংলাদেশে রেজিস্ট্রার্ড ছিল এবং পরে পালিয়ে ভারতে গিয়েছিল।
বিজিবি প্রধান আরও জানান, ভারতের বিভিন্ন স্থানে থাকা কিছু রোহিঙ্গার কাছে ইউএনএইচসিআর-এর আইডি কার্ডও পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে তারা ভারতে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃত। তিনি সাংবাদিকদের সামনে সেই পরিচয়পত্রও উপস্থাপন করেন।
ডিজি বলেন, “যাদের প্রকৃত বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত করা গেছে, তাদের নিজ নিজ এলাকায় ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু যাদের বাংলাদেশি হওয়ার প্রমাণ নেই, তাদের ফরমাল চ্যানেল ছাড়া এইভাবে অনুপ্রবেশ করানো মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিএসএফ কোনো দায় স্বীকার করছে না এবং বলছে, এরা হয়ত নিজেরাই ফিরে এসেছে বা ভারতে ঢুকেছিল। বিজিবি তা মানছে না এবং এর প্রতিবাদে পতাকা বৈঠকে প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করেছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও ভারতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান আরও জানান, খাগড়াছড়ি সীমান্তে এখনও ২০০-৩০০ জন রোহিঙ্গা অপেক্ষায় রয়েছে যাদের পুশইনের চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে সীমান্তে বিজিবির সজাগ দৃষ্টি ও টহল বাড়ানোর ফলে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি জানান, সুন্দরবনের দুর্গম মান্দারবাড়িয়া চরে ভারতের একটি জাহাজ থেকে ৭৮ জনকে ফেলে দেওয়া হয়, যাদের কোস্টগার্ড উদ্ধার করেছে এবং ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
সবশেষে তিনি বলেন, “সীমান্তের জনবসতিহীন স্থানগুলো টার্গেট করে ভারত এই পুশইন কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা পরিকল্পিত ও আন্তর্জাতিক রীতিনীতির পরিপন্থী।”