এক রাম-পাঠা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখলেন, বাংলাদেশকে সঠিক ট্র্যাকে আনতে হলে ঘরে ঘরে তসলিমা নাসরিনের মতন নারীদের জন্ম দিতে হবে। কথাটা কিন্তু জোশ। সত্যিই তাহলে মাথায় ‘ইয়ে’ ওঠে যাওয়া মানুষদের আর ধর্ষণকাণ্ড ঘটাতে হতো না, হাতের নাগালেই সব পাওয়া যেতো। আর যাইহোক অন্তত নারীদের অত্যাচারের খবর আর সামাজিক ও গণমাধ্যমে চাউর হতো না।
তবে পুরুষ ধর্ষিত হবার খবর সামাজিক ও গণমাধ্যমে প্রকাশ পাবে কিনা তা বলতে পারছি না। অবশ্য এ ব্যাপারে জার্মান প্রবাসী ব্লগার জোবায়েন সন্ধি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি প্রশ্ন রেখেছেন তসলিমা সম্পর্কে।
তিনি বলেছেন, তসলিমা জার্মান এসে তার থেকে বয়সে অন্তত পনেরো বছরের কম পুরুষের ওখানে উঠেছিলেন এবং সেই পুরুষকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ‘ইয়ে’-কর্ম করতে বাধ্য করেছিলেন। সন্ধির প্রশ্নটা ছিল, এটাকে পুরুষ ধর্ষণ বলা যাবে কিনা। অবশ্য ঘরে ঘরে তসলিমার মতন নারীর জন্ম হলে সারাদেশ যোনিতন্ত্রে পরিণত হবে, তখনও হয়তো যোনিতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রশ্ন করা হলে তাও নারীর বিরুদ্ধে বুলিং বলে প্রচার করবে তসলিমাপক্ষ।
উপরের লেখা থেকে বাংলাদেশে অতিপ্রগতিশীলরা বলবেন, আমি বোধহয় নারীদের বিরুদ্ধে এবং ধর্ষণকাণ্ডের পক্ষে। অতিপ্রগতিশীলরা অতিগতির কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটাতেই পারেন। ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে কথা বলার আগে, একটা প্রশ্ন করি, বাংলাদেশ থেকে কি হঠাৎ করেই রাসেল ভাইপার উধাও হয়ে গিয়েছে? না, যায়নি, তারা আছে যথারীতি, গত বর্ষাতেও ছিল, আগত বর্ষাতেও থাকবে। কিন্তু ‘মিডিয়া হাইপ’ শেষ হয়ে গিয়েছে। নাকি, মিথ্যে বললাম?
ডেইলি স্টারের পরিসংখ্যান দিই। তারা জানিয়েছে, ‘৫ বছরে ১২ হাজার নারী-কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা, ৬ হাজারের বেশি ধর্ষণ’। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৩টার বেশি ধর্ষণের ঘটনা, ৬টার বেশি সহিংসতা ঘটেছে। কিন্তু এখন যে পরিমাণ মিডিয়া অ্যাটেনশন, তখন ছিল না কেন? সত্যি বলতে গেলে, ছিল না, রাসেল ভাইপার যে কারণে উধাও হয়ে গিয়েছে সে কারণে।
তবে রাসেল ভাইপার বিষয় নিয়ে যেহেতু কথা উঠলো তখন বাংলাদেশের গণমাধ্যমের চিত্রটা তুলে ধরি। ‘মিডিয়া হাইপ’ শব্দটির মানে হলো গুরুত্বহীন একটি খবরকে কিংবা কোনো সাধারণ বিষয়কে অতিগুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা। রাসেল ভাইপার ছিল তেমনি একটি কম গুরুত্বপূর্ণ খবর। কারণ এই সাপ দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের জলাঅঞ্চলগুলিতে ছিল। সুতরাং একে ‘মিডিয়া হাইপ’ বানানো হয়েছে বিশেষ কারণে। সোজা কথায় ফ্যাসিজমকে প্রমোট করতে। কিন্তু ধর্ষণ তো কম গুরুত্বপূর্ণ বা সাধারণ কোনো ঘটনা নয়, তাহলে এতদিন এসব নিয়ে এত কথা হয়নি কেন? কেন আজকে রাসেল ভাইপার বিষয় তুলে আনতে হচ্ছে অতিগুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে? তার কারণ গণমাধ্যম সব নিয়ে ফ্যাসিস্টদের সমর্থনে খবর করতে গিয়ে সব খবরকেই ‘হাইপ’ বানিয়ে ফেলেছে। গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণের বিভেদ তুলে দিয়েছে তারা। যার ফলেই তসলিমার মতন এক ‘হাইপ’ তোলা ক্যারেক্টার সব বিষয়কেই ‘হাইপ’ বানিয়ে তোলার স্পর্ধা দেখায়, দেখাচ্ছে।