ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল সোমবার বিকাল ৫টায় বিশ্বের সব ভারতীয় দূতাবাস এবং হাইকমিশনের প্রধানদের সঙ্গে ভিডিও সম্মেলন করেছেন।বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ে আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া জানার জন্য প্রথমবারের মতো ভারতীয় মিশনসমূহের এ ধরনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো।ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।ভিডিও সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সমাধানের জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হয়। যে কারণেই এই বিশ্বায়নের যুগেও বিশ্বের বেশিরভাগ অংশই নিজেদের আলাদা করে রেখেছে। মহামারি মোকাবিলার জন্য এই পদক্ষেপ অনিবার্য হলেও এর চূড়ান্ত পরিণতিও এসেছে; কারণ বিশ্বব্যবস্থা থমকে যাওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক পরিবহণ ব্যবস্থা, বাজার ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছে।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত এই রোগটির সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে এবং পরবর্তীতে বৃহত্তর প্রাদুর্ভাব রোধে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়েই অভূতপূর্ব এবং দ্রুত প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে ভারত কর্তৃক বাস্তবায়িত বিশ্বের বৃহত্তম সঙ্গনিরোধ এবং বন্ধ কর্মসূচি। প্রধানমন্ত্রী মহামারি সংকটের কয়েকটি কেন্দ্রবিন্দুতে আটকাপড়া ভারতীয়দের সরিয়ে নেওয়ার প্রয়াসের জন্য মিশন প্রধানদের প্রশংসা করেন। তিনি তাদের পাঁচটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছিলেন: ১। তাদের নিজেদের, পরিবারের এবং দলের সবার স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করা। ২। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ সীমাবদ্ধতা অব্যাহত রাখার অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশে থাকা ভারতীয়দের পাশে থাকা। বিদেশে থাকা ভারতীয়দের মনোবল বাড়ানোর জন্য এবং তাদের বিদেশে অনিশ্চিত অবস্থানের কারণে উদ্ভূত সমস্যাগুলোর সমাধানসহ, আশ্রয়ব্যবস্থা ও অন্যান্য সম্ভাব্য সমস্যার সমাধান করার জন্য তিনি ভারতীয় মিশনের প্রধানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
৩। কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ের জন্য সতর্কতা অবলম্বন এবং তাদের কর্মস্থলে সর্বোত্তম অনুশীলন, বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহের উৎসগুলো শনাক্ত করা। তিনি সদ্য প্রতিষ্ঠিত পিএম-কেয়ারস তহবিলে বিদেশ থেকে অনুদান সংগ্রহের জন্য যথাযথভাবে প্রচার করতে মিশন প্রধানদের পরামর্শ দিয়েছেন। ৪। যেহেতু এই সংকট অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলবে, তাই প্রধানমন্ত্রী বিদেশি অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সরবরাহ, কারিগরি শৃঙ্খলা, রেমিটেন্স এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বাণিজ্য যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও নজর দেওয়ার জন্য মিশন প্রধানদের পরামর্শ দেন। ৫। কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষিতে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি গভীর পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখা।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বেইজিং, ওয়াশিংটন ডিসি, তেহরান, রোম, বার্লিন, কাঠমান্ডু, আবুধাবি, কাবুল, মালে এবং সিওল এই দশটি মিশনের রাষ্ট্রদূতরা প্রধানমন্ত্রী এবং বাকি শ্রোতাদের কাছে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন। তারা নিজেদের কর্মস্থলের দেশগুলোতে এই মহামারি মোকাবিলার জন্য ভারত কর্তৃক গৃহীত দৃঢ় পদক্ষেপগুলোর প্রশংসামূলক প্রতিক্রিয়াসমূহ তুলে ধরেন। মিশন প্রধানরা বিদেশে আটকাপড়া ভারতীয়দের, বিশেষত শিক্ষার্থী ও কর্মীদের সহায়তার জন্য তাদের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। তারা এই মহামারি মোকাবিলায় ভারতের নিজস্ব জাতীয় প্রচেষ্টাতে সহায়তা করতে পারে এমন ওষুধ, চিকিৎসা, যন্ত্র, প্রযুক্তি, গবেষণা এবং অন্যান্য পদক্ষেপগুলো শনাক্ত করার প্রচেষ্টা সম্পর্কেও জানান।
এ ছাড়া মিশন প্রধানরা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে অন্যান্য দেশ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা এবং তাদের সেরা পদক্ষেপগুলোসম্পর্কেও জানান। কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ভারতের উদ্যোগে গঠিত সার্ক বিশেষ তহবিলের মাধ্যমে সেসব দেশগুলোর গৃহীত ব্যবস্থায় সহায়তামূলক পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট মিশন প্রধানরা। মিশন প্রধানরা তাদের কাজে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।সবশেষে, মোদি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন যে, ভারতের মিশনগুলো দেশ থেকে অনেক দূরে থাকা সত্ত্বেও কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ে পুরোপুরি অংশগ্রহণ করছে। এ সময় তিনি জাতির ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে সব ভারতীয় নাগরিকের ঐক্য ও সতর্কতার প্রতি জোর দেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।