ট্রাম্পের সফরের মধ্যেই মুসলিম নির্যাতনে মেতে ওঠেন হিন্দুত্ববাদীরা
ভারতে মুসলমান বিক্ষোভকারীদের ওপর ভারী কুঠার, লোহার রড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন হিন্দুত্ববাদীরা। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো প্রাণঘাতী এই সহিংসতায় ধর্মভিত্তিক নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর তারা পাথর নিক্ষেপ ও গুলিও করেন। নয়াদিল্লিতে মুসলমান বিক্ষোভকারীদের ওপর হিন্দুত্ববাদীদের হামলায় এক ডজনের বেশিও নিহত ও কয়েকশ আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার হাসপাতাল কর্মীদের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও আরব নিউজ এ তথ্য দিয়েছে।
মুসলিমবিদ্বেষী এই দাঙ্গায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরও ম্লান হয়ে গেছে। গত ডিসেম্বরে ধর্মভিত্তিক নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। এর পর এটিই সবচেয়ে বড় সহিংসতার ঘটনা বলে খবরে জানা গেছে।সপ্তাহের শেষে শুরু হওয়া এই সহিংসতা সোমবারে মারাত্মক প্রাণঘাতী রূপ নেয়। মঙ্গলবার উত্তরপূর্ব দিল্লির বেশ কয়েকটি এলাকায় নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প যেখানে আলোচনা করতে বসেছেন, সেখান থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে এই প্রাণঘাতী সহিংসতা দেখা গেছে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ভারতের রাজধানী। স্থানীয় টেলিভিশনের খবরে দেখা গেছে, একটি টায়ার মার্কেটে আগুন ধরিয়ে দিলে সেখানে থেকে ধোয়ার কুণ্ডলী বের হচ্ছে। রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, লাঠি ও পাথর হাতে একদল লোককে উত্তরপূর্ব ভারতের একটি অংশে এগিয়ে যেতে দেখেছেন তারা। ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিশান রেড্ডি বলেন, ভারতের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে এটি ষড়যন্ত্র। এমন এক সময় এটি ঘটেছে, যখন ট্রাম্প ভারত সফরে এসেছেন।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি ও দলটির সমর্থকরা মুসলমানদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা এই সহিংসতা উসকে দিয়েছে। মোহাম্মদ শাকির নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, আমাদের কোনো অস্ত্র নেই, কিন্তু তারা আমাদের ওপর গুলি করছে। বিজেপি মুসলমানদের শেষ করে দিতে চাইছে। তারা ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে। সহিংসতায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অধিকাংশই গুলিতে আহত হয়েছেন। গুরু তেগ বাহাদুর হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, ১৩ জন নিহত ও ১৫০ জনের মতো আহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই গুলিতে আহত হয়েছেন। আল হিন্দ হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, তাদের এখানে দুজন নিহত ও দুই শতাধিক আহত হয়েছেন।
বিক্ষোভ উসকে দিতে পারে এমন বক্তব্য না দিতে রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়ার পর বিজেপি নেতা বিএল সান্তোস বলেন, খেলা এখনই শুরু হবে। ভারতের আইন কী, তা তাদের শেখাতে হবে।
নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনার পর সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, তিনি সহিংসতার কথা শুনেছেন। কিন্তু মোদির সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি। তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করতে চাইনি। আমি বিষয়টি ভারতের ওপর ছেড়ে দিতে চেয়েছি। তারা সঠিক সিদ্ধান্তটি নেবেন বলেই আমাদের ধারণা। উত্তরপূর্ব নয়াদিল্লিতে ফল-সবজির দোকান ও মাজারে হিন্দুত্ববাদীরা আগুন ধরিয়ে দিলে কালো ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।