Eyewitnesses claim Indian security forces are using live ammunition against unarmed protesters at Jamia Millia University.#CitizenshipAmendmentAct
ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার দেশটির বিভিন্ন প্রান্তের সরকারি-বেসরকারি শত শত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশ ও দেশটির আধা-সামরিক বাহিনী লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সংঘর্ষে কয়েকশ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
সমালোচকরা বলেছেন, ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী সরকার ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ভারতে বিভাজন তৈরি করতে এই নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে এসেছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, দেশটির উত্তরাঞ্চলের লকনৌ শহরের একটি কলেজের প্রবেশদ্বারে তালা দিয়েছে পুলিশ। শিক্ষার্থীদের রাস্তায় বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশ এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
Eyewitnesses claim Indian security forces are using live ammunition against unarmed protesters at Jamia Millia University.#CitizenshipAmendmentAct
এ সময় ক্যাম্পাসের ভেতরে থেকে শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাথর নিক্ষেপ করেছে। শহরের অন্য একটি কলেজের কয়েকডজন শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন। রোববার নয়াদিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর বেধড়ক লাঠিপেটার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে দেশটির শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা জামিয়া মিলিয়া ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে কমপক্ষে ১০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। একই ধরনের সংঘর্ষ হয়েছে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তর প্রদেশের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।
নতুন নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে যেসব অমুসলিম শরণার্থী ভারতে গেছেন; তারা দেশটির নাগরিকত্ব পাবেন। সমালোচকরা বলছেন, এই আইনে মুসলিম শরণার্থীদের ব্যাপারে একই ধরনের বিধান রাখা হয়নি; যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে।
কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করায় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন নয়াদিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নাজমা আক্তার। দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের মারধর করবে এটা প্রত্যাশা করা যায় না।
Eyewitnesses claim Indian security forces are using live ammunition against unarmed protesters at Jamia Millia University.#CitizenshipAmendmentAct
Visuals from Aligarh Muslim University.
Security Forces throwing stones and using tear gas on AMU students who were protesting against #CABBill2019 .
From #JamiaMilia to AMU, they are trying to muzzle our voice. #JamiaProtest pic.twitter.com/LIoDd4DXFW
নয়াদিল্লির প্রাণকেন্দ্রের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। টিয়ার গ্যাসের আঘাতে লাইব্রেরির জানালা ভেঙে গেছে। পুলিশি নিমর্মতা ও শিক্ষার্থী আটকের ঘটনায় সোমবার নয়াদিল্লিতে পুলিশের সদর দফতরের সামনে শত শত মানুষ জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তবে পুলিশ বলছে, তারা সংযত থেকে দায়িত্ব পালন করেছে।
দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে মোদির সরকার সমাজে বিভাজন তৈরি করছে। দেশটির স্বাধীনতার জনক মহাত্মা গান্ধীর আদর্শের কথা বিক্ষোভকারীদের স্মরণ করে দিয়ে তিনি বলেছেন, এই নোংরা অস্ত্রের বিরুদ্ধে সর্বোত্তম প্রতিরোধ হচ্ছে শান্তিপূর্ণ, অসহিংস সত্তাগ্রহ।
গত বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়। পরদিন রাষ্ট্রপতি এই বিলে স্বাক্ষর করলে সেটি আইনে পরিণত হয়। বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ করছেন দেশটির হাজার হাজার মানুষ। তবে বিক্ষোভের তীব্র দাবানল দেখা গেছে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গসহ আরও বেশ কিছু রাজ্যে। আসামে বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলি ও লাঠিপেটায় অন্তত ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
এই আইনের বিরুদ্ধে সোমবার পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ করছে রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ। এই আইনের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দেগে জনতার সঙ্গে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে রাজ্যের বাসন্দিাদের বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যদিও রোববার সহিংসতার আশঙ্কায় পশ্চিমবঙ্গের ছয়টি জেলায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সোমবার মুম্বাইয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ও টাটা ইনস্টিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্সেস ক্যাম্পাসে রাতভর বিক্ষোভ হয়েছে। সকালের দিকে এসব ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বম্বে ইউনিভার্সিটি ও দক্ষিণাঞ্চল বেঙ্গালুরুর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন।
মোদির মনে পীড়া
নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ঘটনাকে ‘গভীর পীড়াদায়ক’ বলে মন্তব্য করেছেন। সোমবার এক টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস ও সাধারণ জনগণের স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যাহত করা দেশের আইনের পরিপন্থী।
টুইটে বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে সহিংস বিক্ষোভ ‘দুর্ভাগ্যজনক’ এবং গভীর পীড়াদায়ক। বিতর্ক, আলোচনা এবং মতভেদ গণতন্ত্রের অপরিহার্য অঙ্গ। কিন্তু সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস এবং জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনে বিশৃঙ্খলা তৈরি আমাদের আইনের পরিপন্থী।
সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।