ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও প্রাক্তন বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি মনে করেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ন্যূনতম নৈতিক অবস্থান রাখতেই পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের ক্রিকেট সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। শুক্রবার কলকাতায় এএনআই’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জোর দিয়ে বলেন, খেলাধুলার পটভূমিতে সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই এবং বারবার তা উপেক্ষা করা যায় না।
গাঙ্গুলি বলেন, “হ্যাঁ, ১০০ শতাংশ আমি মনে করি পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধ রাখা উচিত। এটা কোনো তামাশা নয় যে বছর ঘুরে বছর আবার ক্রিকেট খেলতে বসব।” তিনি আরো যুক্তি দেখিয়ে বলেন, দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ না থাকলেও আইসিসি ও এশিয়া কাপের মতো টুর্নামেন্টে একই গ্রুপে পড়ার রীতিও পরিবর্তন করা দরকার। এ বিষয়ে বিসিসিআই আইসিসিকে চিঠি পাঠাতে পারে বলেও জানিয়েছে তিনি।
বর্তমানে ভারত-পাকিস্তান সিরিজের শেষবারের দ্বিপাক্ষিক ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় ২০১২-১৩ মৌসুমে। এর পর থেকে দুই দল সরাসরি মুখোমুখি হতে দেখা যায় কেবল বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও এশিয়া কাপের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে। গাঙ্গুলি মনে করেন, ওই প্রথা যত দিন বজায় থাকবে, তত দিন সন্ত্রাসবাদ প্রবল হুমকি হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, “এটি যদি বিসিসিআই চিঠি দেয়, আমি নিশ্চিত আইসিসি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। খেলাধুলার সুনির্দিষ্ট আদর্শ রক্ষা করতে হবে—সন্ত্রাস কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।” তার ভাষ্য, এই অবস্থান শুধু বিসিসিআই নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরিষদকেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করবে।
বিশ্লেষকরা মন্তব্য করছেন, গাঙ্গুলীর এই প্রস্তাব কেবল ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নয়, গোটা ক্রিকেটের নৈতিক মাপকাঠি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে। ক্রিকেট বোর্ডের পদক্ষেপ যদি এভাবে দৃঢ় হয়, তবে ভবিষ্যতে কোনো দেশই সন্ত্রাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কোনো দেশের সঙ্গে খেলাধুলার সম্পর্ক রাখতে পারবে না।
পাকিস্তানের প্রতি বন্ধুত্বের আমন্ত্রণ থাকলেও সন্ত্রাসের খাবর পুনরাবৃত্তি ঠেকানোই প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বলে মনে করেন গাঙ্গুলি। তিনি বলেন, “আমরা কী খেলাধূলাকে শুধু বিনোদন হিসেবে দেখবো নাকি এর নৈতিক জবাবদিহিতা বিবেচনায় রাখবো? আমি বলব–দ্বিতীয়টি গুরুত্বপূর্ণ।”
ক্রিকেট অঙ্গন এখন নতুন আলোচনার মুখে। শুধু দুই দেশের নয়, সমগ্র বিশ্বকাপ–টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচের কাঠামো নিয়েও ভাবতে হতে পারে। গাঙ্গুলীর রূঢ় বার্তা স্পষ্ট—খেলাধুলার মঞ্চ থেকে সন্ত্রাসবাদকে সরিয়ে ফেলতেই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের প্রস্তাব আনা উচিত।