কলকাতা, ভারতের অন্যতম পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী শহরগুলির মধ্যে একটি, এখন দ্রুত পরিবর্তনের পথে। বিশেষত প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে শহরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। গত এক দশকে শহরের নাগরিকদের জীবনে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। আজকাল কলকাতার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যোগাযোগের জন্য শুধুমাত্র ফোনে কথা বলা, ভিডিও কলে মিলিত হওয়া এবং ওয়ান-টু-ওয়ান যোগাযোগের বদলে, ব্যক্তিরা নানা প্ল্যাটফর্মে একে অপরের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করছেন। এটির সাথে একদিকে যেমন সুবিধা এসেছে, তেমনি অন্যদিকে পারস্পরিক সম্পর্কের গভীরতা ও বাস্তব জীবনে যোগাযোগের মাত্রা কিছুটা সংকুচিত হয়ে গেছে।
কলকাতার বাসিন্দারা আজকাল বেশিরভাগ সময় তাদের সময় কাটান ডিজিটাল মাধ্যমে – সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস, অনলাইন শপিং ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে। শহরের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই প্রবণতা বিশেষভাবে বেশি। তবে, অনেকেই মনে করছেন যে, এই ডিজিটাল জগৎ আমাদের বাস্তব জীবন থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষ করে, অনেকের মতে, একে অপরের সঙ্গে মুখোমুখি যোগাযোগের অভাব এবং একে অপরকে সময় না দেওয়া ব্যক্তি জীবনে একাকিত্ব এবং সম্পর্কের অভাব সৃষ্টি করছে।
কলকাতার একটি সাইকোলজিক্যাল সার্ভে অনুযায়ী, প্রায় ৭০% মানুষ জানিয়েছেন যে, তারা সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশি সময় ব্যয় করার কারণে তাদের পরিবারের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ কমে গেছে। অপরদিকে, ৫০% মানুষ অভিযোগ করেছেন যে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এর মতো প্ল্যাটফর্মে সময় কাটানোর কারণে তারা তাদের বন্ধুদের সাথে পারস্পরিক সম্পর্কের গভীরতা হারাচ্ছেন।
তবে, অন্যদিকে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধাও রয়েছে। কলকাতার মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যোগাযোগের মাধ্যমে তারা নতুন বন্ধু তৈরি করছেন, শিক্ষা গ্রহণে সুবিধা পাচ্ছেন এবং কর্মক্ষেত্রে আরো সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা অনলাইন কোর্স এবং ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করছে, এবং পেশাদাররা তাদের কাজের জন্য বিভিন্ন টুলস ব্যবহার করছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রযুক্তির এই দ্রুত বিকাশের সঙ্গে কিছু সামাজিক সমস্যা তৈরি হলেও, সেই সঙ্গে এটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ারও খুলে দিয়েছে। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, সামাজিক জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে মানুষকে তাদের ডিজিটাল জীবনের পাশাপাশি বাস্তব জীবনে সম্পর্ককে গুরুত্ব দিতে হবে।
এছাড়া, কলকাতা শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রযুক্তির এই পরিবর্তনের সাথে সঙ্গে শহরের মানুষও বেশ সচেতন হচ্ছেন। তারা বুঝতে পারছেন, ভার্চুয়াল দুনিয়া থেকে বের হয়ে প্রকৃত জীবনকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কলকাতার কিছু সামাজিক সংগঠন এবং কমিউনিটি গ্রুপ ইতোমধ্যে প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা করতে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেছে। তাদের উদ্যোগে, মানুষকে বাস্তব জীবনের সম্পর্কগুলো আরো দৃঢ় করতে উত্সাহিত করা হচ্ছে।