ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগাম শহরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর, কেন্দ্রীয় সরকার নিরাপত্তা ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছে। গত ২৪ এপ্রিল, দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় বৈঠকে, সরকার জানায় যে, হামলার জন্য নিরাপত্তার ত্রুটি দায়ী ছিল। একই সময়, সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিরোধী নেতারা অভিযোগ করেন যে, বিপজ্জনক এলাকাগুলোতে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই পর্যটকদের পাঠানো হয়েছিল, যা হামলার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বৈঠকে, সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার বিরোধীদলীয় নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে জানান, সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, স্থানীয় প্রশাসনকে না জানিয়ে পর্যটকদের বিপজ্জনক এলাকায় পাঠানো হয়েছিল, যা সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম কারণ। পেহেলগামে এই হামলার পর থেকে, জম্মু-কাশ্মীরে ব্যবসা ও পর্যটন খাতের উন্নতির ব্যাপারে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, এবং ওই অঞ্চলের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এই হামলাটি বড় আঘাত হেনেছে।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করসহ শীর্ষ সরকারী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তবে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না, যা নিয়ে বিরোধী পক্ষের মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। মোদিকে বিহারের মাধবনিতে নির্বাচনী কর্মসূচি নিয়ে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়, যা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন।
গোয়েন্দা সংস্থা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, হামলার ঘটনা পেহেলগামের মূল সড়ক থেকে ২-২.৫ ঘণ্টা দূরত্বে অবস্থিত। জানানো হয়, সাধারণত অমরনাথ যাত্রার সময় ওই এলাকাটি পর্যটকদের জন্য খোলা হয়, কিন্তু এবার প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া সেখানে পর্যটকদের পাঠানো হয়েছিল।
আম আদমি পার্টির সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেখানে কঠোর নিরাপত্তার প্রয়োজন ছিল, সেখানে কিভাবে পর্যটকদের বিনা অনুমতিতে পাঠানো হয়েছিল? অন্যদিকে, আসাদুদ্দিন ওয়াইসি অভিযোগ করেন, হামলার পর সিআরপিএফ-এর উপস্থিতি না থাকা এবং কিউআরটির ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হওয়ার কারণে আরও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
বৈঠকে, বিরোধী নেতারা হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক প্রচারণার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা দাবি করেন, কিছু রাজনৈতিক দল এবং সংবাদমাধ্যম হামলাটিকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করছে, যা কাশ্মীরি জনগণের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে।
বৈঠকের শেষে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানান, সকল রাজনৈতিক দল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এককভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তান ও এর দোসরদের বিরুদ্ধে একত্রিতভাবে প্রতিশোধ নেওয়া হবে, এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশ এক কণ্ঠে দাঁড়িয়ে কাজ করবে।