ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে শ্বশুরের কবরের ওপরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় খায়রুন আক্তার (৩০) নামের এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিহত গৃহবধূর পরিবারের দাবি, দীর্ঘদিন সন্তান না হওয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সকালে উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের সনগাঁও গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিহত খায়রুন আক্তার ওই গ্রামের তাজমুল হকের স্ত্রী এবং একই ইউনিয়নের জিয়াখোর গ্রামের সাদেকুল ইসলামের মেয়ে।
নিহতের ভাই আলমগীর জানান, প্রায় সাত বছর আগে পারিবারিকভাবে তাজমুল হকের সঙ্গে খায়রুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই সন্তান না হওয়াকে কেন্দ্র করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করত। এ নির্যাতনে জড়িত ছিল স্বামী তাজমুল হক, শাশুড়ি দরিফন বেগম এবং চাচি শাশুড়ি দুলালি বেগম।
আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের মেয়েকে ওরা পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলেছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই, হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রোববার রাতে খায়রুন খাওয়া-দাওয়ার পর নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু সোমবার সকালে গোয়ালঘর থেকে গরু না বের হওয়ায় তাকে খোঁজা শুরু হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বাড়ির পাশেই একটি ভাঙা কবরের ওপরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হলে বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই এমন বর্বর হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এদিকে খায়রুনের শাশুড়ি দরিফন বেগম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি আর আমার জামাই সকালে মরিচক্ষেতে ছিলাম। কে বা কারা এটা করেছে, জানি না। আগে ঝগড়া হতো, তবে গত দুই মাসে কোনো ঝগড়া হয়নি।”
চাচা শ্বশুর এ কে এম মানিক বলেন, “রাতে খায়রুন ঘুমিয়ে পড়েছিল। সকালে ঘরে না পেয়ে খোঁজ শুরু হয়। পরে ভুট্টাক্ষেতে তার জুতা দেখে সন্দেহ হয়। এরপর খোঁজ করতে করতে শ্বশুরের কবরের পাশে মরদেহ পাওয়া যায়।”
বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলী সরকার বলেন, “খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”
পুলিশ জানায়, প্রাথমিকভাবে এটি হত্যাকাণ্ড বলেই মনে হচ্ছে। তবে তদন্তের পরই বিস্তারিত জানা যাবে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।